বিষয় সন্ধান

বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫

ভ্যালুয়েশন-২: আর্নিং ইল্ড নির্ভর রিলেটিভ ভ্যালুয়েশন

প্রশ্ন: ইউনিলিভার, জিপি, ম্যারিকোর মত উন্নত মান সম্পন্য স্টকের ভ্যালুয়েশন কি ভাবে করব?

উত্তর : ইউনিলিভার, জিপি, ম্যারিকোর মত কোম্পানি গুলোর আর্নিং স্টেবিলিটি এবং কন্সিন্টেন্সি অনেক বেশি। ৯ মাসে ১২ টাকা ইপিএস দেখিয়ে বছর শেষে চূড়ান্ত ভাবে ৬ টাকা ইপিএস দেখায় না। আবার এক বছর ২০ টাকা আয় দেখিয়ে পরের বছর ৫ টাকা আয় দেখায় না। অর্থাৎ এই কোম্পানি গুলোর ব্যবসা এবং আয়ে ধারাবাহিকতা রয়েছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুব বেশি ইম্পেক্ট ফেলে না।

এই ধরনের কোম্পানি যার বিশ্বাসযোগ্য, পূর্বানুমানযোগ্য এবং ধারাবাহিক আয় রয়েছে তাদেরকে আর্নিং ইল্ড দিয়ে রিলেটিভ ভ্যালুয়েশন করা সম্ভব। আর্নিং ইল্ড আমাদেরকে বলে কোম্পানিতে করা প্রতি এক টাকা বিনিয়োগের বিপরীতে কত মুনাফা জেনারেট করতে পারে। সাধারণত এটি বুঝার সুবিধার জন্য শতাংশে প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ কোম্পানিতে করা ১০০ টাকা বিনিয়োগের বিপরীতে কত মুনাফা কোম্পানি করে সেটাই প্রকাশ করে আর্নিং ইল্ড (E/P)। ইপি যত বেশি পুজিবাজারে তার বাজার মূল্য তত বেশি হওয়া উচিত। যদি না হয় তবে সেটা আন্ডার ভ্যালুড।

Earning Yield (E/P) = (Annual EPS/ Current Market Price)*100

উদাহরণ: বর্তমানে ৩৬৪ দিন মেয়াদি ট্রেজারী বিল রেট ৯.৬৬%। অর্থাৎ সরকারকে দেয়া প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ৯.৬৬ টাকা পাওয়া যায়। ঘুরিয়ে বললে ৯.৬৬ টাকা মুনাফা/সুদের জন্য ১০০ টাকা দিতে হবে। কোন বন্ড কিংবা শেয়ার যদি ৯.৬৬ টাকার চাতেই বেশি আয় করে তবে তার দাম ১০০ টাকার বেশি হবে। আর আয় ৯.৬৬ এর কম হলে দাম ১০০ টাকার নিচে হবে - এই হল আর্নিং ইল্ড নির্ভর রিলেটিভ ইভ্যালুয়েশনের আইডিয়া।
তাহলে জিপির বর্তমান এনুয়াল ইপিএস যদি ২২ টাকা হয় তবে তার বাজার মূল্য কত হওয়া উচিত?
৯.৬৬ টাকার জন্য দিতে হয় ১০০ টাকা
১ টাকার জন্য দিতে হবে ১০০/৯.৬৬ টাকা
২২ টাকার জন্য দিতে হবে (১০০/৯.৬৬)*২২ টাকা বা ২২৭ টাকা।

অতএব আর্নিং ইল্ড নির্ভর রিলেটিভ ভ্যালুয়েশন অনুযায়ী জিপি ২২৭ টাকা, ম্যারিকো ২৫৫৬ টাকা আর ইউনিলিভার ৪০৯ টাকা দাম পাওয়া উচিত।

এই ফর্মূলা থেকে একটা জিনিস নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পারছেন যে, সরকারি ট্রেজারী রেট (যা এনালিস্টরা রেফারেন্স রেট হিসেবে ধরে) যত কম হবে শেয়ারের ভ্যালুয়েশন তত বাড়বে। এই কারনেই ট্রেজারীতে উচ্চ সুদ চলা কালে শেয়ারের ভ্যালুয়েশন কমে যায়। ফলাফল পুজিবাজার খারাপ হয়। আর ট্রেজারীর রেটে পতন হলে পুজিবাজার ভাল হয়।
এই ফর্মূলা দিয়ে জিপি, ম্যারিকোর দাম জাস্টিফাই করা গেলেও ইউনিলিভারের দাম কিন্তু অবাস্তব এসেছে মানে আরো ভিন্ন কোন ফর্মুলায় ইউনিলিভারকে ভ্যালুয়েশন করতে হবে!! আবার জিপি, মেরিকোর ভ্যালুয়েশন কাছাকাছি গেলেও মার্কেট প্রাইস এখনো বেশি। এর ব্যাখ্যা কি? ব্যাখ্যা হতে পারে মার্কেটের লোকজনের ফিউচার এন্টিসিপেশন। লোকজন আশা করছে সামনে ট্রেজারী রেট আরো কমে যাবে। যদি ট্রেজারী রেট কমে ৮% হয় তখন ২২ টাকা এনুয়াল ইপিএস নিয়েই জিপির ভ্যালুয়েশন দাঁড়াবে ২৭৫ টাকা!!

এই কারণেই ভ্যালুয়েশন ২+২=৪ মেলানোর মত সাইন্স না। স্টক ভ্যালুয়েশন হল ফাইনান্সিয়াল আর্ট। এনালিস্ট হিসেবে যার ফিউচার এন্টিসিপেশন, ইকোনমিক প্রেডিকশন, কোম্পানির বিজনেস আন্ডারস্টেন্ডিং যত ভাল হবে তার ভ্যালুয়েশন তত একুরেট হবে।

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন ও চিত্র শীল্পি, পাড়ার মোড়ের পোস্টার আর্টিস্ট আবদুল ও চিত্র শীল্পি। এখন আব্দুলের ছবি জয়নুলের মত আকর্ষণীয় না হইলে দোষ কিন্তু রং-তুলির না। একই ভাবে ওয়ারেন বাফেটের ভ্যালুয়েশন আর আমার ভ্যালুয়েশন কোন দিন এক রকম হবে না । তাই আমার মত নাদান এনালিস্টের ভ্যালুয়েশন অবাস্তব হইলে কিংবা ভবিষ্যতে না মিললে দোষ কিন্তু ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিসের না।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন