বিষয় সন্ধান

রবিবার, ১০ জুলাই, ২০১১

শেয়ার ব্যবসা - ৩: নিজেই তৈরী করুন নিজের পোর্টফলিও

আজ আমি আলোচনা করব পোর্টফলিও ডিজাইন সম্পর্কে। 'পোর্টফলিও ডিজাইন' শেয়ার ব্যবসার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার এবং তা ব্যাক্তি, বাজারের অবস্থা ও পুঁজির পরিমান ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। প্রফেসনালরা এই রকম ব্যাক্তিগত পোর্টফলিও ডিজাইন করার জন্য ৫,০০০-২০,০০০ টাকা পর্যন্ত চার্জ নিয়ে থাকে,অথচ আপনার একদম ফ্রি পেয়ে যাচ্ছেন।

প্রথমেই আসুন পোর্টফলিও ডিজাইনের প্রভাবকগুল নিয়ে আলোচনা করি। পুঁথিগত জ্ঞান আর ডিএসই -এর বাস্তব অবিজ্ঞতা মিলিয়ে আমার মতে বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের নিম্নক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়া উচিত।


বিনিয়োগকারীর প্রাকার ভেদ - আমাদের শেয়ার বাজারে মোটাদাগে ৩ টাইপের বিনিয়োগকারীর আনাগোনা চোখে পড়ে
  • হুজুগে - এরা এক কোথায় আশ্চর্য শ্রেণীর বিনিয়োগকারী,হার্ডকোর রিস্ক টেকার। হয় ছক্কা নয় অক্কা অবস্থা। গুজবের পেছনেই ছুটেন তারা। 
  • ধীরস্থির- এরা হল কপিবুক ক্রিকেটার টাইপ বিনিয়োগকারি। প্রচুর এনালাইসিস, তথ্য-উপাত্ত বিচার বিশ্লেষন করে বিনিয়োগ করেন। এরা গুজবের ধার ধারেন না,একা একা পথ চলতেই পছন্দ করেন। 
  • তৃতীয় টাইপ হল উপরের দুই শ্রেণীর মিশেল। এরা উপরের দুই শ্রেণীর ক্রিয়াকর্ম দেখে বিনিয়োগ করেন। নিরাপদ এবং ঝুকিপূর্ণ দুই ধরনের শেয়ারই তাঁরা কেনেন, সার্ভাইবাল টাইপের মানুষ আর কি।

শেয়ারের ধরন - সাধারনত ৩ কেটাগরির শেয়ার আছে ডিএসই তে
  • স্টেবল - এগুলোর দাম খুব ধীর গতিতে উঠা নামা করে। ধীর্ঘস্থায়ী বিনিয়োগের জন্য উতকৃষ্ট। লাভ সুনিশ্চিত ।ধীরস্থির টাইপের বিনিয়োগকারীদের বিশেষ পছন্দের শেয়ার (আমার ও) । এক সময়ে ব্যাংক শেয়ারগুল এবং এখন জ্বালানী খ্যাতের শেয়ার এই কেটাগরিতে পরে। 
  • মুভিং - এগুলোর দাম উঠা নামার গতি বাজারের গতির সমান্তরাল মানে বাজারের সাথেই উঠা নামা করে। ঠিরস্থির ও সুযোগ সন্ধানী বিনিয়োগকারীদের বিশেষ প্রিয়। মাঝারি মানের লাভ দেয়। ধির্ঘ ও মধ্যমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত। যেমনঃ বস্ত্র খাতের কোম্পানি সমূহ। 
  • ভোলাটাইল - দাম এই সপ্তাহে মগডালে তো আগামী সপ্তাহে মাটিতে হুজুগে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার। হয় লাভ নয় লস, মাঝামাঝি কিছু নাই আর  লাভ/লস যেটাই হবে ব্যপক আকারে হবে । ষেমন - জেড কেটাগরির শেয়ার।


 বিনিয়োগের ধরন:

  • ধীর্ঘমেয়াদি - ১২ থেকে ১৮ বা ২৪ মাস মেয়াদি বিনিয়োগ। লস হবার কোন চান্সই নাই। 
  • মধ্যমেয়াদি - ৬ থেকে ১২ মাস মেয়াদি বিনিয়োগ। লস হবার চান্স অত্যন্ত কম। 
  • সল্পমেয়াদি - ২ সপ্তাহ থেকে ৩ মাস মেয়াদি বিনিয়োগ। লাভ-লস হবার চান্স ৫০-৫০।

এবার নিজেকেই নিজে বিশ্লেষণ করুন আর নিজের স্টাইল ঠিক করুন। আমি এখানে জেনারেল একটা পোর্টফলিও ডিজাই করতে যাচ্ছি যা বছর শেষে ১৫-০% পর্যন্ত লাভ দিতে সক্ষম-

বিবেচ্য বিষয়:
  • নূন্যতম ২ থেকে ৫ টা সেক্টরের শেয়ার কিনতে হবে। কারন বাজারে একেক সময় একেক সেক্টরের শেয়ারের চাহিদা থাকে। 
  • প্রতি সেক্টর থেকেই ২-৪ টা কম্পানির শেয়ার কিনতে হবে। 
  • মোট শেয়ারের ৩০ % ধীর্ঘমেয়াদি, ৪০-৬০% ভাগ মধ্যমেয়াদি ও বাকিটা সল্পমেয়াদি বিনিয়োগ হতে হবে। 
  • মোট শেয়ারের ২৫ % স্টেবল, ৫৫-৭০% ভাগ মুভিং ও বাকিটা ভোলাটাইল শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে।

ডিজাইন:
ধরুন আপনার মোট মূলধন ১,০০,০০০ টাকা। প্রথমেই এর ২০% আলাদা করে রাখুন। এই ২০,০০০ টাকা হল আপনার সিকিউরিটি মানি যা বিরাট আকারের লস মোকাবেলায় অথবা বাজারে ভাল কোন সুযোগ সৃষ্টি হলে ব্যবহার করবেন।ই টাকা সব সময়ই আপনার বিও একাউন্টে নগদ আকারে থাকবে।

এবার ঠিক করুন কয়টি সেক্টরে বিনিয়োগ করবেন। আমি নিজের জন্য ১লক্ষ টাকার পোর্টফলিও তে ৩ টা সেক্টর বাছাই করতাম, ধরুন - ঔষধ, জ্বালানী ও টেক্সটাইল অর্থাৎ প্রতি সেক্টরের জন্য বরাদ্দ [১,০০,০০০ -২০,০০০ = ৮০,০০০/৩ = ২৬,৬৬৬ টাকা

ঔষধ সেক্টরের জন্য বরাদ্দঃ ২৬,৬৬৬ টাকা
এরার এর ৪০% (১০,০০০ টাকা ) - স্টেবল শেয়ার ক
এর ৪০% (১০,০০০ টাকা ) - মুভিং শেয়ার খ
এবং বাকিটা -> শেয়ার গ এর জন্য রাখুন

একই ভাবে জ্বালানী ও টেক্সটাইল খাতের ২ টি স্টেবল ও ২টি মুভিং শেয়ার মোট ৪ টা শেয়ার কিনুন 
জ্বালানী - স্টেবল ক, মুভিং 
টেক্সটাইল- স্টেবলক, মুভিং 

এখন আপনার হাতে শেয়ার গ এর জন্য ৬*৩ = ১৮,০০০ টাকা আছে যা মূল ধনের ২২% [(১৮,০০০/৮০,০০০)*১০০] কিন্তু আপনি ১০% টাকা ভোলাটাইল শেয়ার মানে ঝুঁকি নেয়ার জন্য ব্যায় করবেন তাহলে গুজবের পেছনে ব্যয় করুন ৮,০০০ আর বাকিটা যে কোন একটা সেক্টরের স্টেবল বা মুভিং শেয়ারের পেছনে ব্যয় করুন

আশা করি স্ট্রেটেজিটা বুঝতে পেরেছেন। উপরে বর্নিত % গুল হল একটা গাইড লাইন কোন রুলস নয় এটা আপনি আপনার মত করে ঠিক করবেন। তবে শতকরা হারগগুলো বড় যোড় ১০-১৫ ভাগ এদিক সেদিক করতে পারবেন । আর টাকার পরিমাণ বেশী হলে সেক্টর সংখ্যা বাড়ান। তবে কোন ভাবেই যেন পোর্টফলিওতে থাকা শেয়ারের সংখ্যা ৪ এর কম ও ১০ এর বেশী না হয়।

1 টি মন্তব্য: