বিষয় সন্ধান

শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

আগামীর সম্ভবনা-8: একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড (একমিল্যাব)

১৯৭২-৭৩ সালে সদ্য-স্বাধীন হওয়া একটি দেশ বাধ্য হয়েছিল বাটলার ট্রেডিং সিস্টেমে (এক পণ্যের বিনিময়ে অন্য পণ্য নেয়া) ইউরোপ থেকে ঔষধ কিনতে। সাত কোটি মানুষের দেশের জন্য যে পরিমাণ ঔষধ লাগে তার মাত্র ৩০ ভাগ দেশি কোম্পানিগুল উৎপাদন করতে পারত। বাকি ৭০ ভাগ ঔষধ কেনার মত ডলার তখন দেশটির ছিল না। তাই পাটের বিনিময়ে তারা ঔষধ আনে ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরি থেকে। আজ চার যুগ পড়ে দেশটি আমূল বদলে গেছে। সাত কোটি মানুষ এখন প্রায় সতেরো কোটি, দেশটি ৯৬ ভাগ জীবন রক্ষাকারী ঔষধ এখন নিজেরাই বানাতে পারে। শুধু তাই নয় নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে বিশ্বের ১৬০ টি দেশে তারা এখন ঔষধ রফতানী করে। ঔষধ শিল্পে সাফল্যের এই গল্প বাংলাদেশের, যে শিল্পে আমরা এখন অদম্য, অপ্রতিরোধ্য, দুর্নীবার। 


২০১৮ সালকে বাংলাদেশ সরকার ঔষধ শিল্প বছর হিসেবে ঘোষণা করেছে। অন্যান্য প্রধান রফতানী পণ্যের ন্যায় ঔষধ শিল্পেও পাঁচ শতাংশ হারে রফতানী প্রনোদোনা দেয়া হচ্ছে। ২০১৫ সালে সাক্ষরিত ট্রিপস চুক্তির বদৌলতে অনুন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সহ মোট ৪৮ টি দেশ ২০৩৩ সাল পর্যন্ত পেটেন্ট ফি দেয়া ছাড়াই ঔষধ উৎপাদন ও রফতানী করতে পারবে। উল্ল্যখ্য যে, উন্নত দেশ গুলতে ঔষদের দাম অনেক বেশি কারন সেখানে পেটেন্টকৃত পণ্য উৎপাদনের জন্য আবিষ্কারক কোম্পানিকে মোটা টাকা ফি দিতে হয় উৎপাদক কোম্পানিকে। এই ট্রিপস চুক্তির কারণে বাংলাদেশ আগামী ১৫ বছর ঔষধ  উৎপাদন পর্যায়ে বড় ছাড় পেয়েছে। 


ইউরোপ-আমেরিকায় জিএসপি সুবিধা পাওয়ায় বাংলাদেশ গত ১৫-২০ বছরে গার্মেন্টস শিল্পে বিপ্লব ঘটিয়ে বিশ্বের ২য় বৃহৎ রফতানীকারক দেশ হতে পেরেছে। এই ট্রিপস চুক্তির কারণে বাংলাদেশের ঔষধ শিল্পের সামনেও একই রকম এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। স্কয়ার, বেক্সিমকো, এসিয়াই, একমি, ইবনেসিনা, রেনেটা, ইন্সেপ্টা, অপসোনিন এর মত প্রথম সারির কোম্পানি গুলো এখন প্রাপ্ত সুযোগ কতটা কাজে লাগায় তাই দেখার বিষয়। বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি আগামী ৫ বছরে রফতানি আয়ে গার্মেন্টস শিল্পকে পেছনে ফেনার স্বপ্ন দেখছে। কত বড় সুযোগ ও প্রস্তুতি থাকলে এমন সাহস দেখানো সম্ভব শুধু তাই ভাবছি ।




একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড - দেশের অন্যতম বৃহৎ ও পুরনো ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি। প্রথম সারির ঔষধ উৎপাদক কোম্পানিগুলোর মধ্যে এর অবস্থান ১০ম। ২০১৬ সালে পুঁজি বাজারে লিস্টেড হবার মাধ্যমে ব্যাবসা সম্প্রসারণ ও ঋণ পরিশোধের জন্য ৪০০ কোটি টাকা উত্তলন করেছে। ১৩০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধের পর বাকি অর্থে এপিআই, এন্টি-বায়োটিক, ট্রেরয়েড-হরমোন ও এন্টি-ক্যান্সার ড্রাগ উৎপাদনের জন্য নতুন প্লান্ট তৈরি শুরু করে। আশাব্যাঞ্জক খবর হল এন্টি-বায়োটিক ও ট্রেরয়েড-হরমোন ইউনিট ২০১৮ সালের শেষ প্রান্তিকে উৎপাদনে আসবে। যা একমির পন্য বিক্রি ও মুনফা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে হবে কোম্পানিটি আশা করছে। 


ব্যাবসায়ীক সম্ভবনাঃ পুজিবাজারে লিস্টেড হবার পর পরই ৩০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করে কোম্পানিটি তার আর্থিক সক্ষমতার জানান দিয়েছে। ২০১৭ সালে ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদানের হার ৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ডিভিডেন্ড বাড়ার পাশাপাশি কোম্পানিটির নিট মুনাফায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি লক্ষ করা গেছে। 



সাল ২০১৪ থেকে ২০১৭, গত চার বছরে কোম্পানিটির বাৎসরিক মুনাফার পরিমাণ ছিল যথাক্রমে -৮৯.৫ কোটি, ৯৯.৩ কোটি, ১১০.২ কোটি ও ১৪০.২ কোটি। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের ৩য় প্রান্তিক পর্যন্ত কোম্পানিটির অর্জিত মুনফার দাঁড়িয়েছে ১১৯.৮ কোটি। আয়ের এই ক্রম উন্নতি অব্যাহত থাকে গত বছরের ১৪০ কোটিকে অতিক্রম করে এমকি এই বছর নেট মুনফার নতুন রেকর্ড গড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।

প্রচলিত ঔষধের পাশাপাশি নতুন প্যান্ট থেকে উৎপাদিত পণ্য বিপণনে এমকি ইতিমধ্যেই তাঁর মার্কেটিং ও সেলস ডিপার্টমেন্ট ঢেলে সাজিয়েছে। অপর উষধ কোম্পানি ইন্সেপ্টা থেকে আগত এক ঝাঁক মার্কেটিং এক্সপার্ট ও বিক্রয় কর্মির সমন্বয়ে এমকি আগামী দিন গুলতে দেশের ভেতর উষধ বিক্রি বাড়ানর পাশাপাশি রফতানী বাড়াবার দিকেও মনোনিবেশ করেছে। কোম্পানিটি যদি আগামী দুই-তিন বছরে তার লক্ষ অর্জনে সক্ষম হয়ত তবে পুজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে নির্ভরযোগ্য এক নাম হয়ে উঠতে পারে একমিল্যাব। 






তথ্যসূত্রঃ একমিল্যাব এন্যুয়াল রিপোর্ট ২০১৬-১৭

আপডেট-১: একমি তাদের আইপিও প্রজেক্টের উদ্ভোধন ৬ মাস পিছিয়ে দিয়েছে।  স্টেরয়েড-হরমোন ও পেনিসিলিন প্রজেন্ট ডিসেম্বর ২০১৮ এর বদলে জুন ২০১৯ সালে উৎপাদনে আসবে।   



৩টি মন্তব্য:

  1. Trading Code: ACMELAB
    News: The Company has informed that the Board of Directors has declared the commencement of Commercial Production of its state of the art Penicillin facility at Dulivita, Dhamrai, Dhaka after successful completion of trial production. The Company noted that the aforesaid Penicillin facility is one of the three projects against which fund was raised through Initial Public Offering (IPO).
    Post Date: 2019-06-13

    উত্তরমুছুন
  2. Trading Code: ACMELAB
    News: The Company has informed that the Board of Directors has declared the commencement of Commercial Production of its state of the art Steroid and Hormone facility at Dulivita, Dhamrai, Dhaka after successful completion of trial production. The Company noted that the aforesaid Steroid and Hormone facility is second of the three projects against which fund was raised through Initial Public Offering (IPO).
    Post Date: 2019-07-02

    উত্তরমুছুন