বিষয় সন্ধান

বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০২২

সরকারি বন্ড

আজ আমাদের পুজিবাজারের জন্য একটা বিশেষ দিন হতে যাচ্ছে। আজ লেনদেন শুরু হতে যাচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত সরকারি বন্ড। বাংলাদেশের পুজিবাজারে বিনিয়োগ মানেই শুধু লস আর লস - এই অভিযোগ যাদের তাদের জন্য অবশেষে নিশ্চিত লাভের উপায় হতে যাচ্ছে এই সরকারি বন্ড।




সরকারি বন্ড কি?
ঘাটতি বাজেট বাস্তবায়ন করার জন্য সরকার দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। সরকার যখন দেশি উৎস থেকে ঋণ নেয় তখন সে দুই ভাবে তা নিয়ে থাকে - (১) সঞ্চয় পত্র বিক্রি করে (২) সরকারি ট্রেজারী বিল-বন্ড বিক্রি করে।
বিনিয়োগের নিরাপত্তা
সঞ্চয় পত্রকে যেমন সেফ ইনভেস্ট ধরা হয় (সরকারি দেউলিয়া হয়ে না গেলে আপনার লস করার কোন সম্ভাবনা নাই। অলমোস্ট জিরো রিস্ক) তেমন সরকারি বিল-বন্ড ও জিরো রিস্ক ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজ। পার্থক্য হল সঞ্চয় পত্র সেকেন্ডারি মার্কেটে ট্রেড করার যায় না। কিন্তু এই বিল-বন্ড গুল মেয়াদ পূর্তির আগেই সেকেন্ডারি মার্কেটে ট্রেড করা যায়।
সরকারি বন্ডের বাজার
সরকারি এই বিল-বন্ডের প্রাধান ক্রেতা-বিক্রেতা হল সরকারি-বেসরকারী ব্যাংক, বীমা, এনবিএফআই এবং উচ্চ সম্পদশালী ব্যাক্তিবর্গ। সরকার বিল-বন্ড বিক্রি করে তাদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ২.৫ লাখ কোটি টাকা ঋন নিয়েছে। সসম্প্রতি ঘোষিত হওয়া ২০২২-২৩ সালের বাজেটে ১ লাখ ৬ হাজার কোটি ঋণ নিবে বিল এবং বন্ড বিক্রি করে।
বন্ডের সেকেন্ডারি মার্কেট
এত দিন ব্যাংক, বীমা এবং উচ্চ সম্পদশালী ব্যক্তিবর্গ বাংলাদেশ ব্যাংককের এমআই মডিউল ব্যবহার করে সরকারি বিল-বন্ড সেকেন্ডারি মার্কেটে ট্রেড করতে পারত। অর্থাৎ শেয়ার যেমন ডিএসই, সিএসই তে ট্রেড হয় তেমন বন্ডের ট্রেড হয় বাংলাদেশ ব্যাংকে। সর্বশেষ অর্থ বছরে ২ লাখ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে বন্ডের সেকেন্ডারি মার্কেটে। অর্থাৎ দৈনিক গড়ে লেনদেন হয়েছে ৮৩৩ কোটি টাকা।
পুজিবাজারে বন্ডের সেকেন্ডারি ট্রেডিং
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সেকেন্ডারি বন্ড ট্রেডিং টাই এখন পুজিবাজারে হবে। ফলে ব্যাংকের এডি ব্রাঞ্চে না গিয়ে ক্ষুদ্র-মাঝারি বিনিয়োগকারীগন এখন তাদের বিও একাউন্ট থেকেই সরকারি ট্রেজারী বন্ড লেনদেন করতে পারবে। শুরুতে সরকারের ২৫৫ টা বন্ড বাজারে লিস্টিং হবে। যাদের ফেস ভ্যালু হবে ১০০ টাকা এবং লট হবে ১০০০।
নিশ্চিত লাভজনক
বিভিন্ন মেয়াদের সরকারি বন্ড আছে যেমন ২/৫/১০/২০ বছর। এদের সুদ হার ও বিভিন্ন। মেয়াদ যত বেশি সুদ হার ও তত বেশি। এগুল ৬ মাস পর পর সুদ আপনার বিও একাউন্টে এটাস্টড ব্যাংক একাউন্টে পাঠিয়ে দেয়া হবে। বন্ডের মেয়াদ শেষে মূল টাকাও একই ভাবে আপনার ব্যাংকে চলে যাবে।
উদাহরণ সুরুপ ধরুন আপনি ২ বছর মেয়াদি ৫% কুপন রেটের ১০০০ টি বন্ড কিনেছেন মোট ১ লাখ টাকায়। যদি ২ বছ আপনি এটি হোন্ড করেন তবে ৬ মাস পর পর ২৫০০ টাকা সুদ পাবেন এবং মেয়াদপূর্তি হলে ১ লাখ টাকা ফেরত পাবেন। যেহেতু এটি সেকেন্ডারি মার্কেটে ট্রেড হবে সেহেতু আপনি চাইলে ২ বছর মেয়াদ শেষের আগেই এটি সেকেন্ডারি মার্কেটে বিক্রি করে মূল পুজি তুলে নিতে পারবেন। ধরুন আপনি কেনার ৩ মাস পারেই এটি বিক্রি করে দিতে চাচ্ছেন। এই ক্ষেত্রে ইল্ড কার্ভ ভিত্তিক প্রাইসিং হওয়ায় সেকেন্ডারি মার্কেটে আপনি এমন দাম পাবেন যাতে ঐ ৩ মাস হোল্ডিং পিরিয়ডের সুদ+মূলধান আপনি পেয়ে যান। সরকারি বন্ডের দাম শেয়ার অথবা ক্লোজ এন্ড মিচ্যুয়াল ফান্ডের মত ভোলাটাইল নয়। তাই ক্যাপিটাল গেইনের সুযোগ যেমন কম তেমন ক্যাপিটাল লসের সুযোগ ও অনেক কম। একমাত্র দেশের নীতি সুদ হারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটলে সেকেন্ডারি মার্কেটে বন্ডের দামের তারতম্য ঘটে। যদি কেনার পরে সেকেন্ডারি মার্কেটে বন্ডের দাম পড়েও যায় তবু মেয়াদ পুর্তি হলে সরকার আপনাকে মূল টাকা সম্পূর্ণ ফেরত দিবে। সুতরাং ধৈর্য্য নিয়ে মেয়াদ পর্যন্ত অপেক্ষা করলে লস হওয়ার কোন সুযোগ নাই। আর যদি কেনার পরে সেকেন্ডারি মার্কেটে দাম বেড়ে যায় তখন সেল দিয়ে লাভ নিয়ে নেয়ার সুযোগ তো আছেই!!
পুনশ্চঃ যারা সুদ এড়িয়ে চলেন তারা অনুগ্রহ করে সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করবেন না। সরকারি সব বন্ডই ইন্টারেস্ট বিয়ারিং বন্ড।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন