বিষয় সন্ধান

সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

মার্কেট কারেকশনে দায় কার?



মার্কেট পড়লেই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝে শুরু হয় কারণ খোঁজার হিড়িক। শেষ পর্যন্ত দায় চাপে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান কর্তা ব্যাক্তির কাঁধে। কিন্তু শুধু 

নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান কেন একা দায়ী হবেন ? বস্তুত  সারা মার্কেট ২৪ ঘন্টা চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আমার-আপনার মত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর পুজি খেয়ে ফেলার জন্যে। নিজের পুজি রক্ষা করে বাজার থেকে মুনাফা তোলাই সবার চূড়ান্ত লক্ষ্য এখানে । সবাই এখানে এসেছে ব্যবসা করতে, চ্যারিটি করতে নয়। সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে ক্যাপিটাল গেইন পাওয়া মানেই অন্য কেউ লস গুলবে। ৯ জন লস গুনলে তবেই ১ জনের মুনাফা হয়। আপনি যদি কোম্পানির ডিভিডেন্ড খেয়ে মুনাফা করতে চান তবে আপনার হিসাব আলাদা। বাকি যারা সেকেন্ডারি মার্কেটে কেনাবেচা করে ক্যাপিটাল গেইন চায় তাদের জন্য নির্মম সত্য হল - একের পুঁজি অন্যের পকেটে মুনফা হিসেবে জমা হয়। 

সুতরাং বিএসইসি চেয়ারম্যান, কমিশনার,  ডিএসই, বাংলাদেশ ব্যাংক, ইন্সটিটিউট, মামু, ফেসবুক এডমিশন, আইটেমবাজ, প্যানিকবাজ - এত লোকের দোষত্রুটি খুজে বেড়ানো নিস্ফল কর্ম। সবাই যার যার চরিত্রে অভিনয় করছে মাত্র। আপনি কোন চরিত্রে অভিনয় করবেন তা বেছে নেয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা আপনার ।

২০২০ সালে ২২% এবং ২০২১ সালে ২৫% গেইন দিয়েছে পুঁজি বাজার। যার বীজ বপন করা হয়েছিল ২০১৮-১৯-২০ এর প্রথম ভাগ পর্যন্ত টানা ২.২৫ বছর পতন ঘটিয়ে ইন্ডেক্স ৩৬০০ নামানোর মধ্য দিয়ে। বিএসইসি তে নতুন কমিশন আসার পর সেই ইনডেক্স ৩৬০০ থেকে ৬০০০  হয়েছে। প্রায় ২৪০০ পয়েন্টের
র‍্যালির পার আমরা আবার ৯০০ পয়ন্ট এর কারেকশন দেখেছি। ঐ পতন ছিল পরবর্তী ২৩০০ পয়েন্ট র‍্যালির (৫১০০ টু ৭৪০০) পূর্ব প্রস্তুতি।

আমার ব্যাক্তিগত বিশ্বাস এবারের ৭৪০০ থেকে ৬৬০০ হয়ে যাওয়া ৮০০ পয়েন্টের কারেকশন হল ভবিষ্যৎ র‍্যালির আতুর ঘর।আমার-আপনার যথেষ্ট পুজি এবং ক্ষমতা নাই মার্কেটে টার্গেটকৃত ষ্টকের দাম কমিয়ে পজিশন নেয়ার। কিন্তু যাদের সেই ক্ষমতা আছে তারা সময় সুযোগ পেলে তা মোক্ষম ভাবে কাজে লাগাবে - এটা খুব স্বাভাবিক বিষয়। পার্ট অফ মার্কেট ম্যাকানিজম। রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ, ৮৫০০ কোটি নেগেটিভ ইক্যুইটি ডিসেম্বর ২০২২ এ শূন্যে নামানোর আল্টিমেটাম কিংবা মার্কেট প্রাইসে এনবিএফআই এক্সপোজার গননায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার - এই সবই সেই উপলক্ষ মাত্র। 

প্রানীজগতে যারা পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে চলতে পেয়েছে তারাই টিকে গেছে, বাকিরা সময়ের সাথে হারিয়ে গেছে। প্রাগৈতিহাসিক যুগের তেলাপোকা টিকে থাকলেও বিশাল আকৃতির  ডাইনোসর, ম্যামথরা হারিয়ে গেছে। সার্ভাইভাল ফর দ্যা ফিটেস্ট - এই মন্ত্র দুনিয়ায় সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। পুজিবাজার ও তার ব্যাতিক্রম কিছু না।

৮০০ পয়েন্টের পতনে নিশ্চিত ভাবেই আমরা কমবেশি সবাই লস গুনেছি। কিন্তু শোকর আলহামদুলিল্লাহ মার্কেট আউট হয়ে যাই নাই। এই মুহুর্তে করনীয় কি? মূল্য পতনকে যথা সম্ভব কাজে লাগানো। টাকা থাকলে কিনতে হবে যাচাই-বাছাই করে। আর ক্যাশ না থাকলে প্ল্যান করতে হবে পরের র‍্যালিতে বর্তমান আন-রিয়ালাইজ লসের চাইতে বেশি রিয়ালাইজড গেইন কি ভাবে হবে।
বাজারে বছর জুড়ে থাকতে হলে ঋতু ভেদে লস গুনতে হবে আবার লাভ ও হবে। প্রথম লক্ষ - পুজি হারিয়ে মার্কেট আউট হয়ে যাওয়া যাবে না। আর দ্বিতীয় লক্ষ - লাভের চাইতে কম লস করা। তবেই লম্বা সময় টিকে থাকা সম্ভব। আর টিকে থাকতে পারলে মুনাফা হবেই - কম অথবা বেশি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন