বিষয় সন্ধান

বৃহস্পতিবার, ২০ জানুয়ারী, ২০২২

বেক্সিমকো সুকুক বন্ডঃ ভয় বনাম সম্ভবনা

অতি সমপ্রতি পুঁজি বাজারের বহুল আলোচিত ৩০০০ কোটি মূল্য মানের বেক্সিমকো সুকুক বন্ডের লেনদেন শুরু হয়েছে। বন্ড আমাদের বাজারে চালু হওয়া নতুন একটি বিনিয়োগ পণ্য । সুতরাং এটি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ধারনা কম থাকবে - এমনটা অস্বাভাবিক কিছু না ।


একে নতুন ইন্সট্রুমেন্ট তার উপর বেক্সিমকোর অতীত কর্মকান্ডে শুরুতেই এই বন্ড পাবলিকের মনোযোগ আকর্ষণে ব্যার্থ হয়েছে আইপিওতে। সেকেন্ডারি মার্কেট ডেব্যু ও খুব একটা সুখকর নয় । লেনদেন শুরুর মাত্র তৃতীয় দিনেই ১০০ টাকা মূল্য মানের সুকুক ৯১ টাকায় নেমে এসেছে । আমার ব্যাক্তিগত ধারনা এই অস্বাভাবিক অবস্থার জন্য যতটা না দায়ী বন্ড/সুকুক নিয়ে পর্যাপ্ত জানাশুনার অভাব , তার চাইতে বেশী দায়ী পুঁজি বাজারে বেক্সিমকো গ্রুপের ইমেজ সংকট। মার্কেট থেকে বেক্সিমকো সিনথেটিকের সেচ্ছায় ডিলিস্ট হওয়ার ঘোষণা দেয়ার দেড় বছর পরেও বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত না পাওয়া  এবং তার আগে বেক্সিমকোর মালিকানাধীন জিএমজি এয়ালাইন্সের প্লেসমেন্ট শেয়ারের টাকা ফেরত না পাওয়া অন্যতম ইস্যু।

অতীতের এসব তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ধারনা হয়েছে যে সালমান এফ রহমান সাহেবের বেক্সিমকো শেষ পর্যন্ত
সুকুকের মূল টাকা ফেরত দিবে না। তাদের  এমন নেতিবাচক চিন্তার জন্য দোষ দেয়ার ও উপায় নাই। কারন বেক্সিমকোর অতীত কর্মকাণ্ড এই ধারণা তৈরি করেছে। সুতরাং ভাল কিছু করে বেক্সিমকোকেই তাদের ইমেজ ঠিক করতে উদ্যোগী হতে হবে। 

 

 
 
পাব্লিক পারসেপশন থেকে এবার আসি সুকুকের আইনগন দিকে, এই ইসলামিক বন্ড ( যা সুকুক নামে পরিচিত)  হল একটা এসেট ব্যাকড, সিকিউর্ড বন্ড।  বাজারে প্রচলিত অন্যন্য কর্পোরেট বন্ড যেমন ব্যাংক কর্তিক ইস্যুকৃত পার্পিচ্যুয়াল বন্ডগুল আন-সিকিউর্ড এবং নন-এসেট ব্যাকড। অর্থাৎ সুকুক বন্ড থেকে মুনাফা এবং বিনিয়োগকৃত মূল পুজি ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা আন-সিকিউর্ড এবং নন-এসেট ব্যাকড বন্ডের তুলনায় বেশী রয়েছে। এই কারণে সুকুকের টাকায় কেনা সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেক্সিমকোর নামে রেজিস্ট্রি না করে সুকুক পরিচালনাকারী সংস্থার (এসপিভি) নামে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। ৫ বছর মেয়াদে ১০ কিস্তির মুনাফা অথবা মেয়াদ শেষে মূল পুজি ফেরত দিতে অক্ষম হলে ট্রাস্টি সুকুকের টাকায় কেনা  সম্পদ বিক্রি করে (এসেট লিকুইডেশন) সুকুক হোল্ডারদের টাকা ফেরত দেবে। লিকুইডেশোনে যেতে মামলা-মোকদ্দমায় যাওয়ার প্রয়োজন হবে না,   শুধু মাত্র বিএসইসির অনুমতি নিয়ে লিকুইডেশন প্রসেস শুরু করা যাবে।

অর্থাৎ আইনগত ভাবে বিনিয়োকৃত অর্থ ফিরে পাবার ক্ষেত্রে কোম্পানির শেয়ার অথবা মিচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিট থেকে সুকুক তুলনামূলক নিরাপদ। লস হয়েছে এই কথা বলে বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড না দিয়ে কোম্পানি বা মিচ্যুয়াল ফান্ড বছরের পর বছর পার করে দিতে পারে। কিন্তু সুকুকের ক্ষেত্রে এমন কিছু হলে সোজা এসেট লিকুইডেট হয়ে যাবে। তাছাড়া এই সুকুক বন্ডের রয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ারে কনভার্ট হওয়ার অপশন। এই কনভার্শন বিষয়টা ঐচ্ছিক। সুকুক হোল্ডাররা চাইলে বন্ডটি বেক্সিমকর  শেয়ারে কনভার্ট হবে আর না চাইলে হবে না। অতএব কেউ যদি সুকুকের মেয়াদ শেষে মূল পুঁজি ১০০ টাকা ফেরত পাবার ব্যাপারে সন্দিহান থাকেন, তিনি প্রতি বছর ২০ শতাংশ হারে সুকুক বন্ড শেয়ারে কনভার্ট করে আর্লি এক্সিট নিতে পারবেন। 

সুকুক আইন মেনে বেক্সিমকো সময় মত মূল টাকা ফেরত দিবে, সুকুকের টাকায় তৈরি সোলার পার্ক ব্যবসায়ীক ভাবে লাভজনক হবে - এই সবই কাগজপত্র অনুযায়ী সম্ভব। তবে পাব্লিক পার্সেপশন দ্রুত বদলাবে কি না তা বলা মুশকিল। তাই যারা সুকুকে বিনিয়োগ করবেন তাদেরকে জেনে বুঝে রিস্ক নিতে হবে। ব্যবসা করতে গেলে লাভ-লসের রিস্ক থাকবেই। ব্যবসায় তাই অন্ধের মত না জেনে-বুঝে রিস্ক নেয়ার চাইতে ক্যালকুলেটিভ রিস্ক নেয়াই যৌক্তিক।

আমার ব্যাক্তিগত ক্যাল্কুলেশন হল বছরে ১৫% মুনাফার এই সুকুক থেকে করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে ১১-১২% আসবে বন্ডের কুপন থেকে । বাকি ৩-৪% সুকুক বন্ড সেক্সিমকোর শেয়ারে কনভার্ট জনিত ক্যাপিটাল গেইন থেকে।  অর্থাৎ ৫ বছরে ১০০ টাকার পুজি আরো ১০০ টাকার মুনাফা জেনারেট করার ভাল সম্ভবনা আছে। আইনগত ভাবে মেয়াদ শেষে মূল পুজি ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা ও আছে। সুতরাং ৫ বছরে পুজি দ্বিগুণ করার জন্য বেক্সিমকো সুকুক বন্ডে বিনিয়োগ করার রিস্ক নেয়া যায়। বিনিয়োগ সুরক্ষায় এসেট ব্যাকড, সিকিউর্ড এবং কনভার্টিবল অপশন থাকার পড়েও যারা এই সুকুকে আস্থা পাচ্ছেন না তারা আপাতত পর্যবেক্ষণে থাকুন। ১-২ বছর নিয়মিত ভাবে কুপন/মুনফা  দেয়া শুরু করলে হয়তো অনেকের বিশ্বাস তৈরি হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন