বিষয় সন্ধান

রবিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২১

ডিভিডেন্ড নিয়ে হতাশা

ডিভিডেন্ড মৌসুম চলছে। স্বভাবতই বিনিয়োগকারীগন বিভিন্ন কোম্পানির ডিভিডেন্ড নিয়ে হতাশ। কেউ কেউ আবার উচ্চসিত।  ১৯ টাকা আয় করে UPGDCL দিল ১৭ টাকা। ডিভিডেন্ড দেখে খুশি হলেও সেই কোম্পানির বিনিয়োগ কারীরা হতাশ কারন মার্কেট রিয়েকশন হয়েছে উলটো। দাম পড়ে গেছে ১৬ টাকা। সম্ভব বছর জুরে সাব-সিডিয়ারি গুলোর মোটা অংকের ডিভিডেন্ড ঘোষণা দেখে অনেকে ধারণা করেছিলেন ইপিএস হয়তো ৩০-৩৫ টাকা হবে, অনেক বেশি ক্যশ ডিভিডেন্ড অথবা স্টক বোনাস আসবে। কিন্তু কোম্পানিটি শুধু এই বছরের আয়ের উপর ডিভিডেন্ড দিয়েছে। বাকিটা যোগ করেছে রিজার্ভে।

আরেক কোম্পানি কনফিডেন্স সিমেন্ট বছর জুড়ে ভাল ভাল কোয়ার্টারলি ইপিএস রিপোর্ট করেছে। এনুয়াল আর্নিং ও বেশ ভালই এসেছে। গত বছরে ৬ টাকার বিপরীতে এই বছর প্রায় ১৬ টাকা দেখিয়েছে ( যদিও প্রত্যাশা ছিল ১৮+)। কিন্তু গোল বেধেছে ঘোষিত ডিভিডেন্ড নিয়ে। ১৬ টাকা আয় করে দিয়েছে মাত্র ২.৫ টাকা!

খালি চোখে এটাকে স্রেফ চুরি-ডাকাতি মনে হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। বিনিয়োগকারীরা নিজেদের বঞ্চিত, প্রতারিত ও ভাবতে পারেন। তাদের এই অবস্থাকে আমি ভুল চিন্তা ও বলব না। নিশ্চিত ভাবেই তারা প্রাপ্য ডিভিডেন্ড পায় নাই। তবে আমার কাছে এটা তাদের সর্ট-টার্ম নগদ প্রাপ্তির চিন্তা ভাবনা মনে হয়।

এ ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হল - বিনিয়োগকারী হিসেবে আমার, আপনার দেখা উচিত কোম্পানি এই রেখে দেয়া টাকায় রিজার্ভ বারিয়ে করছে টা কি? সে কি ব্যবসা বড় করার জন্য রি-ইনভেস্ট করছে? অতীতে এই ধরনের রি-ইনভেস্ট যদি করে থাকে তা দিয়ে কি প্রফিটিবিলিটি বাড়াতে পেরেছে? যদি পেরে থাকে তবে তাদের ডিভিডেন্ড পে-আউট কমিয়ে দেয়ায় হতাশার কিন্তু নাই। আমি-আপনি ১/২ বছরের চিন্তা করলেও ঐ ধরনের গ্রোথ কোম্পানিগুল ৫/১০ বছর মেয়াদি লং-টার্ম চিন্তা থেকে রি-ইনভেস্টে যায়। আজকে যে টাকা ডিভিডেন্ড না দিয়ে রেখে দিল তার ফল হয়তো ২/৪ বছর পরে আসবে। এমন ক্ষেত্রে আমাদেরকে ও ঐ কোম্পানিতে লং-টার্ম চিন্তা ভাবনা করে ইনভেস্ট করতে হবে।

আমাদের বাজারের স্কয়ার, রেনেটা কিংবা অলেম্পিক - এভাবেই আয়ের তুলনায় কম ডিভিডেন্ড দিয়ে সেই টাকা রি-ইনভেস্ট করে আজকের অবস্থানে এসেছে। আবার বিপরীত চিত্র ও আছে। ভাল আয় করা সত্যেও স্টক ডিভিডেন্ড এর নামে কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বিনিয়োগকারীদের টাকা রেখে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই টাকায় ব্যবসা আর বড় করতে পারে নাই। ক্ষেত্র বিশেষে লুটপাট হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ন্যাশনাল ব্যাংক, এক্টিভ ফাইনের অতীত দেখা যেতে পারে।

বিনিয়োগ গুরু ওয়ারেন বাফেটের বার্ক শায়ার হ্যাতওয়ে সারাজীবনে মাত্র এক বার ডিভিডেন্ড দিয়েছে। এবং সেই ডিভিডেন্ড দেয়াটাকেও বাফেট নিজের ভুল স্বীদ্ধান্ত মনে করেন। কারন তার ভাষায় ডিভিডেন্ড দিয়ে বিনিয়োগকারীরা হয়তো পিকনিকে যাবে, কেউ গাড়ি-বাড়ি কিনবে। কেউ কেউ হয়তো বার্কশায়ারের শেয়ারই আরেকটু বেশি করে কিনবে। কিন্তু আমি যদি সেই টাকা রেখে দিয়ে কয়েক বছরে দুই-তিন গুন করে দিতে পারি তবে গাড়ি-বাড়ি বা ভ্যাকেশনে খরচ করার চাইতে সেটা বেশি লাভ জনক হবে।

হ্যা আমাদের বাজারে হয়তো বাফেটের মত স্মার্ট ওয়েলথ ম্যানেজার নাই, যারা দুই বছরে আমার-আপনার টাকা ডাবল করে দিবে। তবে স্কয়ার, রেনেটা, অলিম্পিকের মত কিছু কোম্পানি আছে যা ছোট থেকে আজকে জায়ান্ট হয়েছে মূলত আয়ের পুরোটা ডিভিডেন্ড না নিয়ে রি-ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে।
তাই কম ডিভিডেন্ড পেলে আপনি হতাশ হতে পারেন। কিন্তু তাতে ভয় পাওয়ার কিছু নাই যদি আপনার কোম্পানি রেখে দেয়া টাকায় পরের বছর গুলতে তার ইপিএস, এনেভি তে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উন্নতি ঘটাতে পারে।



পরিশেষে সেই ১৬ টাকা আয় করে ২.৫ টাকা দেয়া কোম্পানির কিছু অতীত রেকর্ড আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। অতীতে ঐ কোম্পানি ৬-৭-১০ টাকা ইপিএস দেখিয়ে কোন বারই ২/৩ টাকার বেশি দেয় নাই। রেখে দেয়া টাকা প্রতিবার রি-ইনভেস্ট করেছে। যার ফলাফল হল মাত্র ৩৬ কোটি মুনাফা করা কোম্পানি এই বছর ১২৫ কোটি মুনাফা করেছে। এবারো বড় অংকের টাকা ডিভিডেন্ড না দিয়ে রেখে দিয়েছে। অতীত রেকর্ড ঠিক থাকলে যার ফল হয়তো আগামী ৩/৪ বছর পরে পাওয়া যাবে। ১০০% পাওয়া যাবেই সেই গেরান্টি অবশ্য নাই। ব্যবসা মানেই অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ লাভ-ক্ষতির ৫০-৫০ চান্স। তবে আশাবাদী হই এই কারণে যে যারা ব্যবসায় মনোযোগী তারা সবাধারনত ব্যার্থ হয় না। আগামী বার ও তারা সফল হবে সেই আশা রাখি।
আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি কোম্পানি যদি ৫/১০ গুন বড় হয় তবে বিনিয়োগকারী হিসেবে আমার টাকাও ৫/১০ গুন বাড়বে। তবে তা তখনই হবে যখন কোম্পানির এই অভিযাত্রার পুরোটা সময় আমি সংগি হতে পারব।




1 টি মন্তব্য: