বিষয় সন্ধান

বুধবার, ১০ জুন, ২০২০

পুজিবাজারে বাই ব্যাক আইন ও প্রাসংগিক ভাবনা

পুজি বাজারের বহুল প্রত্যাশিত বাই ব্যাক আইন তৈরি করার কথা জানিয়েছে বিএসইসির একটি সূত্র। এই খবরে বাজারের সবার মত আমিও খুশি।  কিন্তু সবাই যে কারণে খুশি, আমার খুশির কারণ তার চাইতে কিছুটা ভিন্ন।

 সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ধারণা হল বাই ব্যাক আইন হলে তাদের পুজির নিরাপত্তা বাড়বে। কোন কোম্পানি আর ফেসভ্যালুর নিচে যাবে না। যদি কোন স্টেক্ত দাম ফেস ভ্যালুর নিচে নেমে যার তবে কোম্পানিটির পরিচালকগণ সাধারন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সেই শেয়ার কিনে নিবে। তাদের এই ধারণা আংশিক সত্য, পুরোপুরি নয়। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত বাই ব্যাক আইন সাধারন বিনিয়োগকারীদের উপকারে আসবে যদি কোম্পানির পরিচালকগন চায়। কিন্তু এই আইন হলেই সবার পুজি নিরাপদ হয়ে যাবে তা না।

আমাদের বাজারে যে সব কোম্পানি এখন ফেস ভ্যালুর নিচে তাদের অধিকাংশের উতপাদন বন্ধ, কোন আয় নেই, ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল নেই, ব্যাংকে জমানো নগদ কাটাও নেই। সুতরাং এসকল কোম্পানিকে বাই-ব্যাক করতে বলা আর শেয়ার হোল্ডারদের সাথে তামাশা করা একই কথা। কারণ শেয়ার বাই ব্যাক করার জন্য যে টাকা দরকার তা কোম্পানির কাছে নাই। টাকা থাকলে কোম্পানির উতপাদন বন্ধ হত না, ব্যাংক ঋণ ও ডিফল্টটেড  হত না। পুজিবাজারে লিস্টেড প্রতিটা কোম্পানি পাব্লিক লিমিটেড কোম্পানি। অর্থাৎ এগুল সীমিত দায়বদ্ধ প্রতিষ্ঠান। কোম্পানির দায় মেটাতে তার শেয়ার হোল্ডার বা পরিচালকগন তাদের ব্যক্তিগত অন্য সম্পদ ব্যবহার করতে বাদ্ধ নন। কোম্পানি ঋন খেলাপি হলে অথবা শেয়ার বাই ব্যাক করতে হলে তার জন্য কোম্পানির সম্পদ খরচ করতে পারবে। মালিকরা তার ব্যাক্তিগত সম্পদ/পুজি বিক্রি করে ঋন ফেরত দিবে না অথবা শেয়ার বাই ব্যাক করবে না। তাই ইউনাইটেড এয়ার, কেয়া কসমেটিক্স, আরএন স্পিনিং, এমারেন্ড অয়েল মার্কা কোম্পানির পরিচালকরা তাদের ব্যাক্তিগত বাড়ি, গাড়ি বেচে শেয়ার বাই ব্যাক করবে এমন ধারনার কোন বাস্তব ভিত্তি নাই।

তাহলে বাই ব্যাক আইনের কোন সুফল কি সাধারন বিনিয়োগকারী পাবে না? জি কিছু সুবিধা আছে যা সাধারণত বিনিয়োগকারীর পক্ষে যাবে। যেমন -

  • এই আইন হওয়ার পর বিএসইসি চাইলে নতুন আইপিও, রাইট ইস্যু, এমাল্গেমেশন করতে চাওয়া কোম্পানি গুলাকে শেয়ার বাই ব্যাক করার শর্ত দিয়ে প্রস্তাব পাশ করবে। আইপিও, রাইট ইস্যু করার ৩/৬/১২ মাসের মধ্যে বাজার মুল্য নির্দিষ্ট লেভেলের নিচে নেমে গেলে কোম্পানিকে শেয়ার বাই ব্যাক করতে হবে। এর ফলে আইপিও, রাইটে অস্বাভাবিক প্রিমিয়াম দাবী করা হ্রাস পাবে।
  • যে সকল কোম্পানির বিশাল ক্যাশ রিজার্ভ/এফডিয়ার আছে কিন্তু তা খরচ করে আয় বাড়ানোর কোন সুযোগ কোম্পানি  পাচ্ছে না,  তারা সেই টাকায় পুজিবাজার থেকে তাদের নিজেদের শেয়ার বাই ব্যাক করে নিতে পারে। এতো কোম্পানির  নেট প্রফিট একই রকম থাকলেও মোট শেয়ার সংখ্যা বা পেইড আপ ক্যাপিটাল  কমে যাওয়ায় পরের বছর কোম্পানির ইপিএস, এনেভি বেড়ে যাবে। তাতে কোম্পানির সকল বিনিয়োগকারী লাভবান হবেন ।  
  • বাজারে অস্বাভাবিক পতন হলে অন্যান্য কোম্পানির সাথে ভাল কোম্পানিগুল দাম হারায় । এখন বাজারে এই ফ্লোর প্রাইস একটিভেট থাকার পড়েও মার্কেট বায়ার লেস কিন্তু কিচ্ছু কোম্পানি আছে যারা এই দামে আন্ডার ভ্যালুড। অথচ নিজেদের লস হবে এই বিবেচনা করে কোন পরিচালক নিজের কোম্পানির শেয়ার কেনার ঘোষণা দিচ্ছে না। অথচ তারা জানে তাদের স্টক আন্ডার ভ্যালুড। বাই ব্যাক আইন থাকলে এই অবস্থায় কোম্পানির পরিচালকরা ক্যাশ ডিভিডেন্ড না দিয়ে অথবা কম দিয়ে সেই টাকায় পাব্লিক মার্কেট থেকে শেয়ার কিনতে পারবে। এতে এক দিকে মার্কেট সাপোর্ট পাবে, তাদের শেয়ার বাউন্সবেক করবে, বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবে। পাশাপাশি শেয়ার সংখ্যা কমে যাওয়ায় তাদের ইপিএস, এনেভি বেড়ে যাবে। ফলে পরের বছর তারা আরো ভাল ডিভিডেন্ড দিতে পারবে।

মূলত এই বাই ব্যাক আইনের বড় সুবিধা পাবে ভাল লাভজনক কোম্পানির পরিচালক ও তাদের লং-টার্ম ইনভেস্টরগন। মার্কেট কারেকশনে পড়ে তাদের শেয়ার বড় ধরনের মূল্য পতন হলে তারা কোম্পানির শেয়ার খোলা বাজার থেকে কিনে নিয়ে নিজেদের শেয়ারকে সাপোর্ট দিতে পারবে এবং মার্কেট কারেকশনকে কাজে লাগিয়ে তাদের সম্পদ মূল্য ও ভবিষ্যৎ আয় বাড়াতে পড়বে। তাই এই বাই ব্যাক আইন বাজারের ফান্ডামেন্টালি স্ট্রিং, ক্যাশ রিচ কোম্পানিগুলোর মালিক পক্ষ ও তাদের লং-টার্ম ইনভেস্টরদের জন্য মুনাফা বাড়ানোর নতুন সুবিধা নিয়ে আসবে। বিএসইসির এই উদ্যোগ সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য । 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন