বিষয় সন্ধান

শনিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৬

খেলোয়ারের কাজ খেলায় মনোযোগ দেয়া,স্কোরবোর্ড দেখা দর্শকের কাজ

আমাদের শেয়ার বাজারে আবারো মূল্য পতন ঘটেছে। নতুন বছরে বাজার সূচক ৪৬২৪ পয়েন্ট নিয়ে যাত্রা শুরু করে মাসের শেষ প্রান্তে এসে ৪৫৪০ এ অবস্থান করছে। শুরু আর শেষের ব্যবধান হিসেব করলে ২১ কর্ম দিবসে বাজার সূচক কমেছে মাত্র ৮৪ পয়েন্ট। কিন্তু প্রকৃত চিত্র বেশ খানিকটা ভিন্ন। মাসের প্রথম ১৩ দিনে সূচক ৭০ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে ৪৬৯৪ এ পৌঁছে গেলেও শেষ ৮ দিনের টানা পতনে সূচক কমেছে ১৫৪ পয়েন্ট। ফলে শুরু আর শেষের ব্যবধান মাত্র ৮৪ পয়েন্ট হলেও মাস জুড়ে বাজারে উত্থান-পতনের তীব্রতা অনেক বেশি অনুভূত হয়েছে।

সূচকের এই রোলার কোস্টারের ন্যায় উঠা-নামায় বরাবরের মতই লাভবান হয়েছেন কৌশলী বিনিয়োগকারীগন। আর যারা ৩ থেকে ৭ দিনের ব্যবসায়ী মানে ডে-ট্রেডার তাঁরা শুরুর দিনগুলোতে লাভের মুখ দেখলেও শেষ দিকে এসে চরম মার খেয়েছেন। তাই আমি সব সময়ই মাঝারী থেকে দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগে বিশ্বাসী এবং আপনাদেরও হাতে সময় নিয়ে বিনিয়োগের পরামর্শ দেই। আমার সব লেখা এই সব বিনিয়োগকারী ভাই-বোনদের জন্য। আর যারা ডে-ট্রেডিং করেন তাদেরকে কিছু বলার মত যথেষ্ট জ্ঞান আমার নেই, তাদের জন্য শুধু শুভকামনা।

প্রত্যেক বিনিয়োগেই ‘বিনিয়োগ পরিকল্পনা’ একটি গুরুতবপূর্ণ ব্যাপার। আপনি কখন স্টক ক্রয়/বিক্রয় করবেন, কখন লাভ তুলে নিবেন আর কখন শেয়ারটি ধরে রাখবেন –এই সবই আপনার বিনিয়োগ পরিকল্পনার অংশ। সল্প থেকে মধ্য মেয়াদি বিনিয়োগে ( ৬ থেকে ১২ মাস) এই পরিকল্পনা যত সুষ্ঠ ভাবে বাস্তবায়ন করা যায় ৩-৭ দিনের ডে-ট্রেডিং এ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ততটা সহজ নয়। কারন এত অল্প দিনে বাজার সূচক ও টার্গেটকৃত শেয়ারটি মূল্য কোনটাই যাথাযথ অনুমান করা সম্ভব নয়। ৫-৭ দিনের ছোট্ট ঝড়েই এক জন ডে-ট্রেডার তার ২৫-৫০% পর্যন্ত মূলধন হারিয়ে ফেলতে পাড়েন।

বাজার ৫১ পয়েন্ট সূচক হারালেও জানুয়ারী মাসে অনেকেই ভাল মুনাফা করেছেন। সল্প মূলধনী কয়েকটি জাংক অথবা ছোট মূলধনের (পরিশোধিত মূলধন ১০০ কোটি টাকার কম) ভাল কোম্পানিগুল এই মাসে ২৫-৩৫% মুনাফা দিয়েছে। যারা তুলনামূলক ভাবে রক্ষণশীল বিনিয়োগকারী তথা বড় মূলধনী স্টেবল কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন তারাও এই মাসে ১০-২০% লাভের মুখ দেখেছেন। উদাহরণ স্বরূপ বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের এসপিপিসিএল, সামিট পাওয়ার, ইউনাইটেড পাওয়ার ইত্যাদি। তিন-চার মাস আগে (অক্টোবর-নভেম্বর ২০১৫) যারা এই কোম্পানির স্টকগুল কিনেছিলেন সামনের ডিভিডেন্ড মৌসুমকে (মে-জুন ২০১৬) টার্গেট করে তাঁরা বেশ ভাল মুনাফা করেছেন। ৯ মাসে তাঁরা যে মুনাফা টার্গেট করেছিলেন তা চার মাসেই পেয়ে গেছেন।

এসপিপিসিএল [ক্রয়-৫২/৫৩ বিক্রয়-৫৯/৬০ মুনাফা -১৩%]
সামিট পাওয়ার [ক্রয়-৩৩/৩৪ বিক্রয়-৪১/৪২ মুনাফা -১৯%]
ইউনাইটেড পাওয়ার [ক্রয়-১৩৫/১৩৬ বিক্রয়-১৬৪/১৬৫ মুনাফা -২১%]

বর্তমান ডাউন মার্কেট তাদেরকে আবার সুযোগ করে দিয়েছে শেয়ারগুল নিয়ে নতুন বিনিয়োগ পরিকল্পনা সাজাবার। হ্রাসকৃত মূল্যে কেনার সুযোগ এলে নিশ্চিত ভাবেই তাঁরা সুযোগের সদ্ব্যবহার করবেন। জানুয়ারীর শেষ দিকে এসে কোম্পানিগুল তাদের প্রান্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা শুরু করেছে। বিনিয়োগকারীদের উচিত এগুল সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করা।

বিশেষ করে মার্চ-জুন ক্লোজিং কোম্পানিগুলোর ২য়/৩য় প্রান্তিকের আয়ের প্রতিবেদন মনযোগ দিয়ে দেখুন। কে জানে এখান থেকেই আপনি আগামী ৬ মাসের জন্য ভাল একটি বিনিয়োগযোগ্য কোম্পানি পেয়ে যেতে পারেন। কী বিশ্বাস হচ্ছে না, ভাল কোম্পানি পেয়ে যাওয়া কি এতই সোজা? জী জনাব খুবই সহজ। গত ৫ বছর ধরে আমি একটি ঔষধ কোম্পানির ষ্টক হোল্ড করছি। বছর বছর ডিভিডেন্ড নেই। দাম অনেক বেড়ে গেলে বিক্রি করে নগদ লাভ তুলে নেই আবার দাম কমার সুযোগে কিনে নেই। এ মাসে প্রকাশিত কোম্পানিটির আয়ের প্রতিবেদনে গত বছরের চেয়ে ৪০% বেশী আয় রিপোর্ট করা হয়েছে। ফলে ভাল ডিভিডেন্ড আসার পাশাপাশি বাজার মূল্যে বড় পরিবর্তন হয়ার সমূহ সম্ভবনা আছে। অথচ গত ৩/৪ মাস ধরে এর বাজার দর একই স্থানে ঘুরপাক খাচ্ছে। একটু চোখ-কান খোলা রাখলে আপনিও নিশ্চত ভাবে এমন কিছু কোম্পানির খোঁজ পেয়ে যাবেন।

বাজার সূচক শুধু সমগ্র বাজারের একটি খণ্ড চিত্র আপনাকে দেয়, এর বেশী কিছু নয়। ৩৪১ টি স্টকের মধ্যে মাত্র ২৩৪ টি এই সূচকের অন্ত্ররভূক্ত। মানে বাজারের একতৃতীয়াংশ কোম্পানি রয়েছে বাজার সূচক ডিএসইএক্স এর আওতার বাইরে। তাই এটি দেখেই আশান্বিত/হতাশাগ্রস্থ হয়ে কোন কোম্পানির ষ্টক ক্রয়/বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া যৌক্তিক নয়। মনে রাখবেন আপনি কোম্পানির ষ্টক কিনছেন বাজারের ইনডেক্স নয়। মার্কেট ইনডেক্স আপনাকে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিনিয়োগকারীদের মনস্তাত্ত্বিক আবস্থা সম্পর্কে নির্দেশনা দিবে কিন্তু কোন ভাবেই একটি স্টকে এন্ত্রি/এক্সিট সিগন্যাল দিবে না।

তাই বাজার সূচকে চোখ রাখুন কিন্তু কোন ভাবেই এটিকে মূল লক্ষবস্তু বানিয়ে ফেলবেন না। শেষ বিচারে কোম্পানির আয়-রোজগারই তার দাম নির্ধারনের মূল নিয়ামক। তাই বিনিয়োগকৃত কোম্পানির আর্থিক অবস্থাকে টার্গেট করুন বজার সূচককে নয়। বিনিয়োগ গুরু অয়ারেন বাফেটের ভাষায় – ‘খেলোয়ারদের মূল কাজ মাঠের খেলায় মনোযোগ দেয়া, স্কোরবোর্ড দেখা দর্শকের কাজ।’ নিশ্চই বুজতে পারছেন ষ্টক মার্কেটে কোনটি খেলোয়ার আর কোনটি স্কোরবোর্ড।








কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন