বিষয় সন্ধান

শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৫

ভাল শেয়ার চেনার উপায়

শেয়ার বাজারে এক জন বিনিয়োগকারীর সাফল্য মোটা দাগে তিনটি বিষয়ে তাঁর দক্ষতা, পারদর্শীতার উপর নির্ভরশীল। এগুলো হলঃ মূলধন ব্যাবস্থাপনা (Money Management), শেয়ার বাছাই (Stock Selection) এবং নিয়মানুবর্তিতা (Stick with the plan)। নিয়মিত চর্চা করে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে এই তিনটি বিষয়ের সুসম সমন্বয় হলেই শেয়ার বাজার থেকে কাংখিত মাত্রায় মুনাফা উপার্জন সম্ভব। বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের মত বিশৃংখল মার্কেটেও এদের গুরুত্ব অপরিসীম।

নিজের অল্পবিস্তর অভিগ্যতা থেকেই বলছি, যদি আপনি এই তিনটি জিনিস নিয়মিত চর্চা করেন তবে শেয়ার মার্কেটে আপনি কখনই পরাজিতদের দলে থাকবেন না। সামগ্রিক ভাবে বাজারের অবস্থা খারাপ ভাল যেমনি থাকুক, আপনি নিজে ভাল অবস্থানে থাকবেন। চর্চার মাধ্যমে আপনি যত বেশী দক্ষ হয়ে উঠবেন আপনার মুনাফা ও সমানুপাতিক হারে বাড়তে থাকবে।

২০১৫ সাল আমাদের শেয়ার বাজারের জন্য আরও একটি হতাশার বছর। ৪৮৬৪ সূচক নিয়ে বছর শুরু করে আমারা ডিসেম্বরে এসেও একই স্থানে ঘুরপাক খাচ্ছি। ৪০০০ থেকে ৪৯০০, এই রেঞ্জেই যেন বাজার আটকে গেছে। দশটির অধিক নতুন কোম্পানির অন্তর্ভূক্তি এবং পুরন কোম্পানি গুলোর লক্ষ লক্ষ বোনাস শেয়ার বাজারে এলেও মার্কেট ইন্ডেক্সের তেমন কোন উন্নতি হয়নি। এ থেকে সহজেই অনুমেয় যে, বাজারের সংখ্যা গরিষ্ঠ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীগন এই বছর মুনাফার দেখা পায়নি। শুধুই হতাশ হয়েছে।

ব্যাক্তিগত ভাবে ২০১৫ আমার জন্য একটি মিশ্র অনুভূতির বছর। মাত্র ৭.৮% মুনাফা নিয়ে বছর শেষ করতে পারায় মহান আল্লাহর প্রতি জানাই লাখ লাখ শোকর। প্রতি ১০০ টাকা মূলধনের বিপরীতে মাত্র ৭.৮ টাকা মুনাফা তেমন উল্লেখযোগ্য সাফল্য নয় নিঃসন্দেহে। এক বছরের আমানতের বিপরীতে ব্যাংকগুল বর্তমানে গড়ে ৬-৬.৫ টাকা সুদ প্রদান করে। তবে পুজিবাজারের অবস্থা বিবেচনায় ৭.৮% মুনাফাও সস্তিদায়ক। প্রায় সবাই যেখানে পূঁজি রক্ষা করতেই হিমশিম খেয়েছে, সেখানে আমি আলহামদুলিল্লাহ অল্প হলেও লাভের দেখা পেয়েছি।

আপনারা নিশ্চয়ই উদগ্রীব হয়ে জানতে চাইছেন, “ ভাই কোন কোন শেয়ার কিনে এমন অসাদ্ধ সাধন করলেন ? ” প্রথমেই জেনে রাখুন, আমি খুবই গড় পড়তা মানের এক জন নবিশ বিনিয়োগকারী। যারা তুলনামূলক যোগ্য ও অভিজ্ঞ তাঁরা ২০১৫ এর টালমাটাল বাজারে আমার চেয়ে দ্বিগুণ -তিনগুণ মুনাফা করেছে। সুতবাং বুঝতেই পারছেন, আমার জানাশোনার বাইরেও গুরুত্বপূর্ণ আরো অনেক কিছু রয়েছে যা আপনাদের মুনাফা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

এবার আসুন জেনে নেই ভাল শেয়ার চেনার উপায় সমূহঃ

  • Price to Earning (P/E): পিই ১৫ বা এর আশেপাশে থাকা ষ্টক সমূহ বাছাই করুন। পিই ২০ এর উপরে থাকা ষ্টক সমূহে বিনিয়োগ তুলনামূলক ভাবে বেশী ঝুকিপূর্ন।
  • Price to Book value (P/B or P/NAV): শেয়ারের ক্রয় মূল্য যেন এর এনএভির তিনগুণের বেশী না হয়। ২০ টাকা এনএভির কোন স্টকের জন্য আপনি সর্বোচ্চ ৬০ টাকা ব্যয় করতে পারেন। 
  • Benjamin Graham number: কেনার আগে স্টকটির বেঞ্জামিন নাম্বার [Square Root (22.5*NAV*EPS)] নির্ণয় করুন। আপনার ক্রয় মূল্য বেঞ্জামিন নাম্বারের চেয়ে ১৫-২০% কম রাখার চেষ্টা করুন।  
  • Increase in Sells: কোম্পানিটি যে পণ্য বা সেবা বিক্রয় করে তা যেন পূর্বের বছরের চেয়ে ১০% বা অধিক বৃদ্ধি পায়। 
  • Increase in Earning: কোম্পানির মোট আয় যেন পূর্বের বছরের চেয়ে ১০% বা তার অধিক বৃদ্ধি পায়। 
  • Dividend Yield: কোম্পানি প্রদত্ত ডিভিডেন্ড ও এর মূল্য অনুপাত ৪ বা তার বেশী হতে হবে। 
  • Payout Ratio: কোম্পানি যা আয় করে তার কতটুকু ডিভিডেন্ড আকারে বিনিয়োগকারীদের প্রদান করে তা হিসেব করুন। নুন্যতম ৫০% থেকে ৮০% বিনিয়োগকারীদের পাওয়া উচিত। 
  • Return on Equity (ROE or EPS/NAV): এই অনুপাত ১০ বা তার বেশী হওয়া উচিত। 
  • Less Debt: অতিরিক্ত ঋণ ভাল লক্ষণ নয়। মোট ঋণ কোন ভাবেই কোম্পানির মোট সম্পদের এক তৃতিয়াংশের বেশী হওয়া উচিত নয়। 
  • Sponsor’s Holding: ৪৫-৬০% ষ্টক অবশয়ই কোম্পানির পরিচালকদের হাতে থাকা উচিত।  
  • Credit Rating: কোম্পানিটি অবশয়ই যেন ‘এএএ’, ‘এএ’ বা ‘এ’ গ্রেডের ক্রেডিট রেটিং ধারী হয়।  
  • Yearly Price Range: গত ২-৩ বছরে স্টকটির বাজার মূল্য দেখুন। চেষ্টা করুন সর্বনিম্ন মূল্যের কাছাকাছি দামে কিনতে। বর্তমান বাজার মূল্য সর্বনিম্ন মূল্যের চেয়ে ৩০% বেড়ে গেলে ঐ ষ্টক না কেনায়ই শ্রেয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন