বিষয় সন্ধান

বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৫

মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশে ডিএসইর দায়িত্বহীন গড়িমসি

নানা সমস্যার আবর্তে ধুকতে থাকা বাংলাদেশের পূঁজি বাজারের অন্যতম প্রধান সমস্যা হল অনিয়ন্ত্রিত গুজব। লিস্টেড কোম্পানিগুল থেকে আগাম মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ফাঁসই এই গুজবের অন্যতম প্রধান উৎস। কিন্তু বর্তমানে নতুন এক বিড়ম্বনা শুরু হয়েছে। লিস্টেড কোম্পানিগুলর পাশাপাশি দুই বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা তথা ডিএসই ও সিএসই এর বিরুদ্ধে যথা সময়ে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ না করে বিশেষ বিশেষ গোষ্ঠিকে সুবিধা পাইয়ে দেয়ার অভযোগ উঠেছে।

দুই বাজারের সমন্বয়হীনতায় মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশে পূর্বে দুই এক দিনের বিলম্ব ঘটার বহু নজীর রয়েছে। কিন্তু এযাবত কালের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে ডিএসই প্রায় এক মাস পূর্বে প্রকাশিত সংবেদনশীল তথ্য তাদের ওয়েব সাইটে সন্নিবেশিত না করে চরম অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়ে চলেছে।

CNATEX পুজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় জানুয়ারী ২০১৫ সালে। এই কোম্পানির প্রায় ৪৬.৫৭% শেয়ার রয়েছে প্রাইভেট প্লেসমেন্টধারী শেয়ার হোল্ডারদের হাতে। এক বছর ধরে লক-ইন থাকা এই শেয়ারের সংখ্যা প্রায় ৭ কোটি ৭০ লাখ। ডিএসইর ওয়েব সাইটে এই বিপুল সংখ্যক শেয়ারেকে ইন্সটিটিউশনাল হল্ডিং হিসেবে দেখান হয়েছে। অথচ এক বছরের লক-ইন মেয়াদ শেষে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকেই শেয়ারগুল বাজারে বিক্র্যযোগ্য হয়ে উঠে। ফলে এমন বৃহৎ সেল প্রেসার সামলাতে না পেরে সেপ্টেম্বরে ১৮-২০ টাকায় লেনদেন হতে থাকা শেয়ারটি মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ১৪-১৫ টাকায় নেমে আসে।

এই বিপুল সংখ্যক শেয়ারের হাত বদলের কোন তথ্য ডিএসইর ওয়েব সাইটে প্রকাশিত না হলেও সিএসই তাদের ওয়েব সাইটে এই তথ্য প্রকাশ করে। দুই বাজারের এই সমন্বয়হীন তথ্যে বিভ্রান্ত বিনিয়োগকারীগন পড়েন বিপাকে। কাদের তথ্য ঠিক আর কাদের তথ্য ভুল এই গোলক ধাদায় পড়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীগন পেনিকড হবেন এটাই স্বাভাবিক। যার কুপ্রভাব পড়েছে শেয়ারটির বাজার মূল্যে। ভাল ইপিএস, এনএভি ও লোভাংশ ঘোষণার পরেও শেয়ারটি রেকর্ড ডেটের আগেই মূল্য হারিয়ে ১২-১৩ টাকায় নেমে এসেছে।

নিচের স্ক্রিনশট দুটি আজ ১৯শে নভেম্বর ২০১৫ সালে নেয়া হয়েছে। প্রথম চিত্রে সিএসই তাদের ওয়েব সাইটে বলছে যে, কোম্পানির ৪৬.৫৭% শেয়ার এখনও ইন্সটিটিউশনাল হল্ডিং হিসেবেই রয়েছে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ২৩.১৪% ষ্টক। মানে লক-ইন উঠে গেলেও প্লেসমেন্টধারীরা কোন শেয়ার বিক্রি করেননি।





অথচ সিএসই তাদের ওয়েব সাইটে বলছে যে, অক্টোবরের আগেই প্লেসমেন্টধারী শেয়ার হোল্ডারগন তদের হাতে থাকা অর্ধেক শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে শেয়ারটির ইন্সটিটিউশনাল হল্ডিং এখন মাত্র ১৯.৭১% আর সাধারন বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৪৯.৯৮%।



বাজার নিয়ন্ত্রণকারী দুই সংস্থাই প্রতিদিন তাদের নিউজ স্ক্রলে ঝুকিপূর্ণ পুজিবাজারে গুজব এড়িয়ে নিজ দায়িত্বে শেয়ার লেনদেন করার উপদেশ দেন। বাজারে গুজব নিয়ন্ত্রণের অন্যতম প্রধান কার্যকরী পথ হল তথ্যের অবাধ প্রবাহ। সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশে দুই বাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থার আরো দায়িত্বপূর্ণ আচরণ আমরা প্রত্যাশা করি। যাদের দায়িত্বে অবহেলার কারনে এই তথ্যের গড়মিল, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জোড় দাবী জানাচ্ছি। এই তথ্য বিভ্রাটে কোম্পানিটির ক্ষতিগ্রস্থ বিনিয়োগকারীদের ভাগ্য যাতে ভবিষ্যতে অন্য কোন বিনিয়োগকারীদের বরণ করে নিতে না হয়, সেজন্য ডিএসই ও সিএসইর পক্ষ থেকে আরও দায়িত্বপূর্ণ আচরণ ও যাথাযথ পদক্ষেপ আমরা প্রত্যাশা করি।










কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন