বিষয় সন্ধান

শুক্রবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৭

বসুন্ধরা পেপার ও একজন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর অলীক স্বপ্ন

পুঁজি বাজারে ভাল কোম্পানির অন্ত্ররভূক্তি সব সময়ই বিনিয়োগকারীদের জন্য কাঙ্ক্ষিত বিষয়। বিশেষ করে আমাদের বাজারে যেখানে চাহিদা থাকা সত্যেও ভাল কোম্পানির স্বল্পতা রয়েছে। বসুন্ধরা পেপার বাংলাদেশের কাগজ শিল্পে একটি পরিচিত নাম। কাগজ ও টিস্যুর বাজারে এটি নেতৃত্ব দানকারী কোম্পানি, যাদের প্রডাক্ট দেশের শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র বিক্রি হয়। তাই পুঁজি বাজারে বসুন্ধরা পেপারের অন্ত্ররভূক্তি নিয়ে সবাই কম-বেশী আগ্রহী।
 
বুক বিল্ডিং মেথড বিশ্ব ব্যাপী জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য একটি লিস্টিং মেথড। যেখানে ইন্সটিটিউট গুল চুল-চেড়া বিচার বিশ্লেষণ, এনালাইসিস ও ভ্যালুয়েশন করে একটি গ্রহণযোগ্য দামে বিডিং করে। ফলে এক দিকে লিস্টিং হতে যাওয়া কোম্পানি ন্যায্য প্রিমিয়াম পায় অপর দিকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অধিক প্রিমিয়াম দেয়ার ফাঁদ থেকে মুক্তি মেলে। কারণ প্রিমিয়াম কত হবে তা লিস্টিং হতে যাওয়া কোম্পানির চাইতে ইন্সটিটিউশনাল বিনিয়োগকারিদের দ্বারা নির্ধারিত হলে তা অধিকতর গ্রহণযোগ্য। তথ্য যাচাই-বাছাই, বিচার বিশ্লেষণ ও গবেষণার কাজে পারদর্শী লোকবল ও অবকাঠামো ইন্সটিটিউশনাল বিনিয়োগকারিদের রয়েছে বলে তাদের উপর নির্ভর ও আস্থাশীল হওয়া অমূলক নয়।

 কিন্তু আমাদের দেশে অবস্থা ভিন্নলিস্টিং এর একটি ভাল সিস্টেমকে তার ফাঁকফোকর ব্যবহার করে কী ভাবে নষ্ট করে ফেলতে হয় তা সম্ভবত আমাদের চাইতে ভাল আর কেউ জানে না। ইন্সটিটিউট গুল জানে গেছে যে, ন্যায্য বা অতিরঞ্জিত যে দামই তারা হাঁকুক তার চাইতে দুই তিন গুন বেশী দামে কেনার মত সাহসী বীর পুরুষ আমাদের সেকেন্ডারী মার্কেটে আছে। তাই চুল-চেড়া বিশ্লেষণ, ভায়লুয়েশন করার ছাইতে বিশেষ মহলের চাহিদা মত একটা কিছু ঠিক করলেই হবে। সম্প্রতি শেষ হওয়া বসুন্ধরা পেপারের বিডিংয়ে মোট ৪৭৪ জন যোগ্য বিনিয়োগকারী অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ৯৬ জনই ৮০ টাকার উপরে বিডিং করেছে। অর্থাৎ প্রায় এক পঞ্চমাংশ বিডার দ্বারা ৮০ টাকা কাট অফ প্রাইস নির্ধারিত হয়েছে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য দাম নির্ধারিত হয়েছে ৭২ টাকা। অপর দিকে ৩০ জুন ২০১৬ সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (রিভ্যালুয়েশন রিজার্ভসহ) হয়েছে ৩০ টাকা ৪৯ পয়সা। রিভ্যালুয়েশন রিজার্ভ ছাড়া হয়েছে ১৫ টাকা ৭৯ পয়সা। একই সময়ে শেয়ার প্রতি আয় (ওয়েটেড এভারেজ) হয়েছে ১ টাকা ৪৬ পয়সা। আয়ের তথ্য অনুযায়ী এই শেয়ার প্রাইমারী মার্কেটেই বুক ভ্যালুর প্রায় আড়াই গুন ও আয়ের তুলনায় প্রায় পঞ্চাশ গুন বেশী দামে বিক্রি হবে। আর সেকেন্ডারী মার্কেটে আসলে কী হবে তা না-ই বা হিসাব করলাম।

মাঝে মাঝে দিবা স্বপ্ন দেখি - যারা কাট অফ প্রাইসের নিচে বিড করাছিলেন তারা ৮০ টাকায় কেনার জন্য আর বিড করবেন না। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নাখোশ হওয়ায় আইপিও আন্ডার সাবস্ক্রাইব হবে। ফলে বাধ্য হয়ে যারা অতিরিক্ত দাম হেঁকেছে তাদেরকে সব শেয়ার ৮০ টাকায় কিনতে হবে। আর সর্বশেষ সেকেন্ডারী বাজারে নুন্যতম গ্রহণযোগ্য দামে না আসলে এই শেয়ার নিয়ে কেউ বিনিয়োগ চিন্তা করবে না।

কুচক্রীদের শায়েস্তা করার এটাই এক মাত্র পথ কিন্তু আমার অলীক স্বপ্ন কী কোন দিন বাস্তব হবে ? খুব সম্ভবত হবে না। নিষ্ফল আক্রোশ আর হতাশাগ্রাস্থ মন তাই শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর খোঁজে - বসুন্ধরা পেপার কি টিস্যু না কি হীরা-মানিক বানায়। কেন তাদের ত্রিশ টাকার সম্পদ সত্তুর-আশি টাকায় বিক্রি হবে?  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন