বিষয় সন্ধান

শনিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১২

শেয়ার বাজার: মিচ্যুয়াল ফান্ডের ইন্দ্রজাল

দীর্ঘ ত্রিশ মাসের খরা কাটিয়ে দেশের দুই শেয়ার বাজারে উত্থানের চিত্য-সুখকার বৃষ্টি নেমেছে। বড় ও ইনিস্টিটিউশনাল বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি নিস্ব-রুগ্ন প্রায় ছোট বিনিয়োগকারীরাও তাই ধীরে ধীরে বাজারে ফিরে আসতে শুরু করাছে। দেরিতে হলেও বাজার যে স্থীতিশিলতার দিকে যাচ্ছে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। কারন পতনের শেষ সীমায় পৌছে যাওয়া ডিএসই/সিএসই -এর উত্থান পর্ব শুরু হওয়া শুধুই সময়ের ব্যাপার ছিল। আশার কথা হচ্ছে যে এই প্রতিক্ষীত উত্থান ধীরে হলেও অবশেষে শুরু হয়েছে।


শেয়ার বাজারে উত্থান-পতন মূদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মতই চক্রাকেরে আবর্তিত হয়। ফলে এই উত্থান ছিল অবধারিত। আর দুনিয়ার সব ব্যবসার মতই এখানেও ' সারভাইবাল অফ দ্যা ফিটেস্ট' থিউরী কার্যকর অর্থাৎ আর্থিক ব্যাবসা-বাণিজ্যে শুধু যোগ্যরাই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে।

দুঃখ যনক হলেও সত্য যে আমাদের বাজারে এই যোগ্য লোকের সংখ্যা নিতান্তই নগন্য এবং অযোগ্যদের যোগ্য হয়ে উঠার চেষ্টায়ও নিদারুন ইচ্ছার অভাব রয়েছে। আমি শুরু থেকেই নিজেকে এবং একই সাথে আমার পাঠকদেরকে এই যোগ্য হয়ে উঠার প্রসেসে সামিল করতে চেয়েছি। সবাই এক দিন সব কিছু বুঝে ফেললেও যে সমস্যার সমাধান হবে এমন নয়। অন্যের চাইতে স্মার্ট না হতে পারলে আর যাই হোক টেকসই মূনাফা লাভ করা সম্ভব নয়। তবে বাজারে যোগ্য লেকের সংখ্যা বাড়লে অতিচাকদের গ্রাস থেকে বাজার তথা নিজেকে বাচান অনেকাংশে সম্ভব হবে।

আমাদের বাজারে যখন মিচ্যুয়াল ফান্ডের আগমন ঘটে তখন অনেক বিনিয়োগকারীই মিচ্যুয়াল ফান্ড ও কম্পানি শেয়ারের পার্থক্য বুঝতে পারেনি। ফলে কম্পানি শেয়ারের মতই চড়া দামে মিচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট কিনে পথে বসেছে।

মিচ্যুয়াল ফান্ড আপনার-আমার মতই একটি বিনিয়োগকারী এনটিটি। আমি-আপনি হচ্ছি ব্যাক্তী শ্রেণীর বিনিয়োগকারী আর মিচ্যুয়াল ফান্ড হল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। আমাদের মূল পার্থক্য হল পূজির পরিমানের তারমম্যে। আমি আপনি যেমন শেয়ার বাজার ও ব্যাংক তথা মানি মার্কেটি অর্থ বিনিয়োগ করি। ঠিক একই ভাবে মিচ্যুয়াল ফান্ড তার মোট অর্থের ৭৫ ভাগ শেয়ার বাজারে ও বাকি ২৫ ভাগ অর্থ বাজারে বিনিয়োগ করে।

এখন যদি আপনি আপনার পোর্ট ফলিওকে সম্পুর্ন বিক্রি করতে চান তবে আপনার পোর্ট ফলিওর মোট দাম নির্ধারিত হবে এতে থাকা শেয়ারগুলর চলতি বাজার-মূল্যে। আর আপনি যদি খুব ভাল এনালিস্ট হলে হয়ত বাজার মূল্যের চেয়ে ১-৫% বেশি দাম দিয়ে কেউ কিনতে চাইতে পারে কিন্তু কোন ভাবেই তার বেশি নয়। ঠিক একই ভাবে মিচ্যুয়াল ফান্ডের দাম ও হবে এর কারেন্ট এনএভি এর সমান বা সর্বোচ্চ ১০% বেশি কিন্তু কোন ভাবেই তার বেশি নয়।

সম্প্রতি মিচ্যুয়াল ফান্ডের বিধিমালা পরিবর্তন করে এতে বোনাস আকারে ফান্ড ইউনিট দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আর তাতেই বাজারে স্মার্ট পিপোলরা মিচ্যুয়াল ফান্ডেকে কম্পানি শেয়ারর মত একই টেটাগরিতে ফেলে অন্যের হাতে বেশি দামে ধরিয়ে দেয়ার ফাদ পেতেছে। আর আমরাও প্রবল উৎসাহে এই উৎসবে যোগ দিয়েছি।

একটি কম্পানি প্রকৃতভাবেই উৎপাদন মুলক বব্যসায় নিয়জিত। ফলে তার মূনাফা সরাসরি উৎপাদ ও বিপনের উপর নির্ভর করে। কিন্তু মিচ্যুয়াল ফান্ডে যেহেতু সরাসরি উৎপাদন মুলক বব্যসায় নিয়জিত নয় সেহেতু এর মূনাফা শেয়ার বাজার ও মানি মার্কেটের প্রাপ্য ডিভিডেন্ শেয়ার কেনা-বেচা ও ইন্টারেস্টের উপর নির্ভর করে। আর একারনেই কোন কম্পানির শেয়ার মূল্য এর সম্পদ তথা এনএভি ও ইপিএস এর চেয়ে কয়েকগুন বেশি হতে পারে। কিন্তু মিচ্যুয়াল ফান্ডের দাম কোন ভাবেই তার এনএভির চাইতে কয়েকগুন বেশি হতে পারে না।

অতএব নতুন পাতা এই ফাদ এড়িয়ে চলুন অথবা লোভ সামলাতে না পারলে স্মার্ট ট্রেডারের মত অন্য কোন বেকুবের হাতে গছিয়ে দিয়ে কেটে পরুন। অবশ্য এতে নিজেই বেকুব বনে যাবার সমুহ সম্ভাবনা আছে। যেহেতু বিনিয়োগ আপনার সেহেতু ঝুকি ও আপনার। সাবধানী অথাবা সাহসী কোন ভূমিকায় নিজেকে দেখতে চান সেই স্বীদ্ধান্ত অন্যের কথায় নয় নিজেই নিজেই নিন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন