বিষয় সন্ধান

রবিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২০

২০১০ সালের ভূত



আফসোস ৯ বছর পার হওয়ার পরেও আমজনতার ২০১০ এর নেশার ঘোর থেকে বের হতে পারে নাই। আমরা এখনো বাজারকে তুলনা করি সেই ২০১০ কে স্টেন্ডার্ড ধরে। অথচ ২০০৯ সালের জুলাই আগস্ট মাসে বাজারের ইন্ডেক্স ছিল ৩০০০, দৈনিক লেনদেন ৪৫০-৫০০ কোটি, ১৩১২৭০ কোটি মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন আর বাজার পিই ১৪/১৫। আর ২০১০ এর ডিসেম্বরে বাজারে লেনদেন হল ৩০০০ কোটি, ইন্ডেক্স ৮৯০০, ৩৬৬৫৬৭ কোটি মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন, বাজার পিই ৩০!

মাত্র ১৫ মাসের মধ্যেই বাজারে লেনদেন বাড়ল ৬ গুন, ইন্ডেক্স হল ৩ গুন আর গড়ে সব শেয়ারের দাম হল ২.৭ গুন। - এই উত্থান কি স্বাভাবিক ছিল? অসস্বাভাবিক সেই বাজারের সাথে এখনকার বাজার তুলনা করতে বসলে অসস্বাভাবিক রেজাল্টই আসবে। এখনকার বাজারকেই বরং অসসাভাবিক মনে হবে।

পেয়াজের কেজি ২/৪ মাস আগেও ২০০ টাকা ছিল। যার সাভাবিক দাম ৩০/৪০ টাকা। এখন দেশের অধিকাংশ চাষি যদি ২০০ টাকা দাম মাথায় নিয়ে চাষের জমি ২/৩ গুন করে ফেলে, চাষাবাদের খরচ ২ গুন করে ফেলে তবে রেজাল্ট কি হবে তা বুঝতে কারো সমস্যা হবার কথা না। যে চাষি বাস্তববাদি সে ৩০/৪০ টাকা কেজি বিক্রি মূল্য ধরেই পেয়াজ চাষ করার রিস্ক নিবে আর বলদা চাষি ২০০ ধরে চাষে নামবে।

আমাদের পুজিবাজারে ও একই কান্ড হয়েছে। ২০১০ এর আগেও এই বাজারে ভুয়া আইপিওর ছড়াছড়ি ছিল। যাতে ২০১১ সালে ৬৬ কোম্পানি ওটিসিতে গেছে। এক জিএমজি এয়ারলাইন
একাই ৩০০ কোটি প্লেসমেন্ট বেচে উধাও হয়েছিল। ৩০০০ কোটি লেনদেনের বাজার হিসাব করে গত ৯ বছরে আরো ১০০ কোম্পানি বাজারে আসল যাদের ৫০-৬০% আগামী ২/৩ বছরে ওটিসি তে যাওয়ার যোগ্য হবে। সেই প্লেসমেন্ট ভুত আবারো মার্কেটে জিন্দা হল।

আর আম জনতাও কম গেল না। এই সব ভুয়া আইপিও ৫/১০ গুন দামে আমরা কিনলাম ঠিক যে ভাবে ২০১০ সালে সব শেয়ার ৪/৫ গুন বেশি দামে কিনেছি। পোর্টফোলিওতে টাকা থাকবে কিন্তু শেয়ার পাওয়া যাবে না - এই ছিল ২০১০ এর টেগ লাইন। আর নয় বছর পরের টেগ লাইন হল সব আইপিও ড্যাবু ডেটে ৪ গুন। শুধু তাই না ২০১০ সালের পোর্টফলিও ডাবল হওয়া আমরা এখনো ভুলতে পারি নাই। এখনো ৬/১২ মাসে পোর্টফলিও ডাবল হওয়ার সপ্ন দেখি আমরা।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং বাজারের পার্টিসিপেন্ট ইন্সটিটিউট ও ব্যাক্তি বিনিয়োগকারীদের যে আচরণ বাজারে ধস নামিয়েছিল সেই একই আচরণ আমরা এখনো করছি। তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি দূরে থাক অবস্থা ২০১২-১৩ চাইতে আরো খারাপ হবে এটাই সাভাবিক।

উন্নতি করতে হলে বিএসইসির চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে ২/৪ লাখ টাকার পোর্টফলিও হোল্ডার আম জনতা সবার চিন্তা চেতনায় আমুল পরিবর্তন দরকার। নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান, কমিশনার তথা ব্যাক্তি বদলিয়ে কোন লাভ নাই। পরিবর্তন চাইলে সিস্টেম বদলাতে হবে। নইলে যাকেই বসাবেন সেই শুটকির বাজারে চৌকিদার বিড়াল হবে। আর বিড়াল আগে থেকে কালো হলে তো কথাই নাই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন