বিষয় সন্ধান

শুক্রবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৮

বিনিয়োগকারীর পাঠশালা-৪ পোর্টফলিও গঠন







এক জন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর জন্য সুষম পোর্টফলিও গঠন অতন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারন একটি সুষম পোর্টফলিও যেমন উঠতি বাজারে বিনিয়গকারীকে ভাল মুনাফা দিয়ে থাকে ঠিক তেমনি পড়তি বাজারে অত্যধিক লোকসান থেকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পুঁজির পরিমাণ যেহেতু অনেক কম তাই চাইলেও তাদের পক্ষে বাজারে ট্রেড হওয়া সব কম্পানি দূরে থাক তাদের নূন্যতম দশ ভাগ কেনা সম্ভব নয়। আমাদের বাজারে কম্পানির সংখ্যা যেখানে ৩৭১ টি সেখানে এক জন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী সাধারণত ৩/৪ টি কম্পানির শেয়ার তার পোর্টফলিওতে রাখেন।
বর্তমানে আমাদের বাজারে ২১ টি সেক্টরে ৩৭১ টি কম্পানি রয়েছে যার ৩২০-৩৩০ টি নিয়মিত ট্রেড হয়। বাজারের সব শেয়ার যেমন একই সময়ে উর্ধমুখী হয় না ঠিক তেমনি সব সেক্টরই একই সময়ে বাজারে নেতৃত্ব দেয় না। আবার ১০/১৫ টি কম্পানি ছাড়া সবগুল কোম্পানিই মূলত দুটি প্রাধান ডিভিডেন্ড মৌসুমকে কেন্দ্র করে মূল্য পরিবর্তন করে। এক জন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর পোর্টফলিও তাই এমন হওয়া উচিত যেন তা বাজারের এই সকল ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্টকে কম বেশি ধারন করতে পারে।
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী তারাই যাদের পুঁজির পরিমাণ ১ কোটি টাকার নিচে, তবে আমাদের দেশের অধিকাংশ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর পুঁজি ১০ লক্ষ টাকার ও কম। তাই আমি স্টেন্ডার্ড হিসেবে ১০ লক্ষ টাকার একটি পোর্টফলিও গঠন করতে যাচ্ছি। যাঁদের পুঁজি ৫-৫০ লাখ টাকার মধ্যে তদের জন্যে ও একই কৌশল প্রযোজ্য শুধু টাকার পরিমাণটি কম বেশী হবে।
পোর্টফলিও গঠন কৌশলঃ
  • রুল-১ প্রথমেই মোট পুঁজির ২০% আলাদা করুন। এই টাকা সব সময় মেচ্যুর্ড ক্যাশ হিসেবে আপনার বিও একাউন্টে থাকবে। এটি হল জরুরী নিরাপত্তা তহবিল। বাজরে সৃষ্টি হওয়া হটাৎ সুযোগ, রাইট/প্রাইমারি শেয়ারে আবেদন অথবা বিনিয়োগকৃত শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক রকম কমে গেলে জরুরী তহবিল ব্যবহৃত হবে। ব্যবহারের ফলে ত্হবিল কমে গেলে নতুন ক্যাশ যোগ করে অথবা পোর্টফলিও তে লাভে থাকা শেয়ার বিক্রি করে যথাসম্ভব দ্রুত তহবিলের পরিমাণ আগের অংকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
  • রুল-২ পোর্টফলিও তে নুন্যতম ২ থেকে ৪ টি সেক্টরের শেয়ার থাকতে হবে আর মোট কম্পানির সংখ্যা হবে ৬ থেকে ১০ টি। তবে কোন ভাবেই যেন কম্পানি সংখ্যা ১২ টির বেশি না হয়। ১ থেকে ১০ লক্ষ টাকার পোর্টফলিওতে ৩ থেকে ৪ টি, ১০ থেকে ৩০ লক্ষ টাকার পোর্টফলিওতে ৪ থেকে ৬ টি,৩০ থেকে ৫০ লক্ষ টকার পোর্টফলিওতে ৬ থেকে ৮ টি এবং ৫০ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকার পোর্টফলিওতে ৮ থেকে ১২ টি কোম্পানির শেয়ার থাকতে পারে।
  • রুল-৩ পোর্টফলিও তে থাকা কম্পানির সংখ্যা ৪ অথবা ১২ যাই হোক না কেন প্রতিটিতেই বিনিয়গকৃত টাকার পরিমাণ সমান বা খুব কাছাকাছি হতে হবে। কম্পানি ভেদে টাকার পরিমানে অত্যধিক গড়মিল হলে বিপদ ঘটতে পারে। বেশি বিনিয়োগ থাকা শেয়ারটির দাম পড়ে গেলে জরুরী তহবিলের টাকায় শেয়ার কিনে যেমন গড় ক্রয় মূল্য কমানো যাবে না তেমনি অন্য শেয়ারগুলর লাভ দিয়েও ঐ ক্ষতি পূরণ করা যাবে না। তাই প্রতি শেয়ারে বিনিয়গের পরিমাণ সমান বা খুব কাছাকাছি রাখুন।
  • রুল-৪ আপনার পুঁজির উপর ভিত্তি করে শেয়ার বাছাই করুন। পুঁজির পরিমাণ ৩ লক্ষ টাকার কম হলে ৫০/৬০ বা তার নিম্ন মূল্যমানের শেয়ার, ৫ লক্ষ টাকার কম হলে ২০০/২৫০ বা তার নিম্ন মূল্যমানের শেয়ার আর ১০ লক্ষ টাকার কম হলে ৫০০/৫৫০ বা তার নিচের মূল্যে লেনদেন হওয়া ফান্ডামেন্টালি ভাল কম্পানির শেয়ার টার্গেট করুন।
  • রুল-৫ পোর্টফলিও তে থাকা কম্পানির সংখ্যা যাই হোক না কেন তার অর্ধেক জুন ক্লোজিং ও বাকি অর্ধেক যেন ডিসেম্বর ক্লোজিং হয় তা নিশ্চিত করুন।
১০ লক্ষ টাকার পোর্টফলিও
প্রথমেই ১০ লক্ষ  টাকার ২০ ভাগ মানে ২ লক্ষ টাকা জরুরী তহবিলে রাখুন। বাকি টাকা সমান চার ভাগে ভাগ করুন। তাহলে প্রতি ভাগে পড়বে ২ লক্ষ টাকা। এই টাকায় মোট ৪ টি ভিন্ন ভিন্ন কম্পানির শেয়ার কিনুন। এই চারটি কোম্পানি যেন দুইটি সেক্টর থেকে আসে এবং দুটি যেন জুন ক্লোজিং ও বাকি দুটি টি যেন ডিসেম্বর ক্লোজিং হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন