বিষয় সন্ধান

শুক্রবার, ২২ মে, ২০১৫

মুনাফা বৃদ্ধির উপায় : ট্রেইলিং স্টপ

বিনিয়গকারীদের প্রায় সবাই হয়ত ‘STOP LOSS’ এই টার্মটির সাথে কম-বেশী পরিচিত। মূলত অধিক লোকসানের কবল থেকে বাচার জন্যই কুশলী বিনিয়গকারীগন এই পদ্ধতি ব্যবহার করেন। বিনিয়োগের সময়কাল (ধীর্ঘ/সল্প মেয়াদী) ভেদে স্টপ লসের পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন হলেও ‘10% STOP LOSS’ বহুল ব্যবহৃত ও জনপ্রিয়।

‘10% STOP LOSS’ এই পদ্ধতিতে এক জন বিনিয়োগকারী কোন শেয়ারে সর্বোচ্চ ১০ ভাগ পর্যন্ত লোকসান হতে দেন। লোকসান ১০% অতিক্রাম করলেই শেয়ারটি বিক্রি করে আরও অধিক লোকসান থেকে নিজেকে রক্ষা করেন। উদাহরণ স্বরূপঃ কম্পানি ক এর প্রতিটি শেয়ারে আপনার ক্রয় মূল্য ১০০ টাকা হলে এর ১০% মানে ১০ টাকা পর্যন্ত আপনি ক্ষতি স্বীকার করতে চাইবেন। বাজার মূল্য যদি ৯০ টাকার নিচে নেমে যায় তবে আপনি শেয়ারটি থেকে বেড়িয়ে যাবেন।

‘Loss Minimization’ এর একটি বেসিক পদ্ধতি হল এই Stop Loss (SL)। উপায়টি আসলে মন্দের ভাল কারন এর অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। এই পদ্ধতি আপনাকে শুধু অধিক মূল্য পতন থেকে বাচায় কিন্তু কোন মুনাফার নিশ্চয়তা দেয় না। উপরের উদাহরণের শেয়ারটি ১০০ টাকায় কেনার পর দাম বেড়ে ১৫০ টাকা হল। দাম আরও বাড়ার প্রত্যাশায় আপনি শেয়াটি বিক্রি না করে ধরে রাখলেন। কিছু দিনের মধ্যেই দাম কমা শুরু হল। কমতে কমতে দাম ৯০ টাকার নিচে না আসা পর্যন্ত Stop Loss আপনাকে কোন Sell Signal দিবে না। ‘10% STOP LOSS’ পদ্ধতি ব্যবহার করায়, শুধু ১০ টাকা ক্ষতিই হল না সাথে সাথে ৫০ টাকা মুনাফা থেকেও আপনি বঞ্চিত হলেন।

এই সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করার এডভান্স পদ্ধতি হল Trailing Stop Loss(TSL)। এই পদ্ধতি স্টপ লসের মতই আপনাকে অধিক মূল্য পতন থেকে বাঁচানোর পাশাপাশি মুনাফার নিশ্চয়তাও দিবে। যারা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেছেন তাদের অনেকেই বুঝতে পারেন না যে কত দামে তার হাতে থাকা শেয়ারটি বিক্রি করবেন। তাই অনেকে শেয়ার কেনার সময়ই একটি টার্গেট ঠিক করে তার অপেক্ষায় থাকেন। অভিষ্ট দাম পেলেই বিক্রি ! ফলে শেয়ার হাত ছাড়া করার পরই দাম আরও বেড়ে যাবার ঘটনা ঘটে উঠতি বাজারে। এমন অবস্থায় আফসোসে হাত কামড়ানো ছাড়া কোন উপায় নাই। নিরাপদ সীমার বাইরে থাকা দামে শেয়ারটি আবার কিনে আটকে যাবার সম্ভবনায় আপনি ভীত; অন্ন দিকে দাম ও ধীরে ধীরে বাড়ছে অর্থাৎ চেয়ে দেখা ছাড়া কোন উপায় নাই।

এই অবস্থা থেকে বাচার একটি ৯০ ভাগ সফল উপায় হল ট্রেইলিং স্টপ লস অর্ডার। ধরুন ১০০ টাকায় কেনা ঐ শেয়ারে আপনার সেল টার্গেট হল ১২৫। সে অনুযাই বিক্রির পড় দাম সর্বোচ্চ ১৫০ টাকায় উঠল। ফলে আপনি যদি আগেই মূল্য টার্গেট করেন তবে অতিরিক্ত ২৫ টাকা লাভ থেকে বন্চিত হলেন, ভাবুন যদি আপনি শেয়ারটি ১৩৫ বা ১৪২ টাকায় বিক্রি করতে পারতেন তা হলেও অতিরিক্ত কিছু পেতেন। একটি শেয়ারের সর্বোচ্চ মূল্য কত হতে পারে তা আমরা কেউই ১০০ ভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারি না। তাই ঐ শেয়ারটি খুব কম ভাগ্যবান বিনিয়োগকারীই সর্বোচ্চ মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন। আর অধিক লাভের আশায় থাকা লোকজন আটকে যাবেন। তাই ১৩৫/১৪২ এ বিক্রি করতে পারলেই আপনার বিনিয়োগ সার্থক কারন আপনি Optimum Profit নিশ্চিত করতে পেরেছেন।

Trailing Stop - নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে এখানে, শেয়ার মূল্য কে ট্রেইল বা অনুসরন করতে হবে। যা আমরা সবাই করি কিন্তু ঠিক উপায়ে করি না। অস্ভাবিক অবস্থা না হলে কোন শেয়ারের দামই টানা বাড়ে না। ৪/৫ দিন বাড়ে আবার ১/২ দিন কমে, আবার বাড়ে। অর্থাৎ উঠা-নামার মধ্যে উঠার গতি বেশি হলেই মূল্য বৃদ্ধি ঘটে।

এবার আমাদের উদাহরনটিতে ফিরে যাই, ১০০ টাকার শেয়ারটি কিনে আপনি ‘10% Trailing Stop Loss ’ (10%TSL) ব্যবহার করা শুরু করলেন। এবার দাম ৩/৪ দিন বারে আবার ১/২ দিন কমে। কোন চিন্তা না করে বাজার মূল্যকে শুধু পর্যবেক্ষণে রাখুনঃ

দিন-১ ক্রয় মূল্য ১০০, 10%TSL- ১০০*০.৯ = ৯০
দিন-২ বাজার মূল্য ১১০, 10%TSL- ১১০*০.৯ = ৯২
দিন-৩ বাজার মূল্য ১২০, 10%TSL- ১২০*০.৯ = ১০৮
দিন-৪ বাজার মূল্য ১১৫, 10%TSL- ১১৫*০.৯ = ১০৩ কিন্তু আমরা ১০৮ এই থাকব

কেনার চতুর্থ দিনে প্রথম বারের মত শেয়ারটির মূল্য ৫ টাকা কারেকশন হল। এই দিন আপনার 10%TSL হওয়ার কথা ছিল ১১৫*০.৯ = ১০৩ টাকা কিন্তু আগের দিনের 10%TSL ছিল ১০৮ যা ১০৩ এর চাইতে বড় তাই আজকের দিনের 10%TSL ১০৩ না হয়ে আগের ১০৮ ই থাকবে। মানে 10%TSL এর মান শুধু বাড়বে কক্ষনো কমবে না।

দিন-৫ বাজার মূল্য ১২৫, 10%TSL- ১২৫*০.৯ = ১১২
দিন-৬ বাজার মূল্য ১৩০, 10%TSL- ১৩০*০.৯ = ১১৭

শেয়ারটি কেনার সময় আপনি মনে মনে টার্গেট করেছিলেন যে, ১২৫ এ বেঁচে দেবেন। আজ যেহেতু দাম ১২৫ অতিক্রম করেছে সেহেতু আপনি হয় 10%TSL এ স্থির থাকুন অথবা কিছুটা আক্রমনাত্নক হয়ে 8%TSL বা 5%TSL এ চলে আসুন।

দিন-৭ বাজার মূল্য ১৩৫ 10%TSL-১৩৫*০.৯=১২১, 8%TSL-১৩৫*০.৯২=১২৪, 5%TSL-১৩৫*০.৯৫=১২৮
দিন-৮ বাজার মূল্য ১৪৫, 10%TSL-১৩০, 8%TSL-১৩৩, 5%TSL-১৩৭
দিন-৯ বাজার মূল্য ১৫০, 10%TSL-১৩৫, 8%TSL-১৩৮, 5%TSL-১৪২
দিন-১০ বাজার মূল্য ১৪০, 10%TSL-১৩৫, 8%TSL-১৩৮, 5%TSL-১৪২ (বিক্রি)
দিন-১১ বাজার মূল্য ১৩৬, 10%TSL-১৩৫, 8%TSL-১৩৮ (বিক্রি)
দিন-১২ বাজার মূল্য ১৩৪, 10%TSL-১৩৫ (বিক্রি)

পদ্ধতিটি নিশ্চই বুঝতে পরেছেন, ১২৫ টার্গেট করে বিক্রি করার চাইতে ১৩৫, ১৩৮ বা ১৪২ এ বক্রি কারা অবশয়ই অনেক বেশি আকর্ষনী। ইউটিউবে সার্চ করলেই এই টেকনিকের কিছু সুবিধা-অসুবিধা পেয়ে যাবেন। তখন ১০%, ৮% ও ৫% ট্রেইলিং স্টপ সেট করার মাজেজা আরো ভাল বুঝবেন। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে ৮% অনুসরণ করি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন