বিষয় সন্ধান

বৃহস্পতিবার, ১৪ মে, ২০১৫

লাভ নিশ্চিত করতে যেমন পোর্টফলিও চাই

এক জন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর জন্য সুষম পোর্টফলিও গঠন অতন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারন একটি সুষম পোর্টফলিও যেমন উঠতি বাজারে বিনিয়গকারীকে সর্বোচ্চ মূনাফা দিয়ে থাকে ঠিক তেমনি পড়তি বাজারে অত্যধিক লোকসান থেকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পুঁজির পরিমাণ যেহেতু অনেক কম তাই চাইলেও তাদের পক্ষে বাজারে ট্রেড হওয়া সব কম্পানি দূরে থাক তাদের নূন্যতম দশ ভাগও কেনা সম্ভব নয়। আমাদের বাজারে কম্পানির সংখ্যা যেখানে ৩২২ টি সেখানে এক জন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী সাধারণত ৩/৪ টি কম্পানিকে তার পোর্টফলিওতে রাখেন। 

বর্তমানে আমাদের বাজারে ২১ টি সেক্টরে ৩৩২ টি কম্পানি রয়েছে যার ৩২২ টি নিয়মিত ট্রেড হয়। বাজারের সব শেয়ার যেমন এক সময়ে উর্ধমুখী হয় না ঠিক তেমনি সব সেক্টরই একই সময়ে বাজারে নেতৃত্ব দেয় না। আবার ১০/১৫ টি কম্পানি ছাড়া সবগুল কোম্পানিই মুলত দুটি প্রাধান ডিভিডেন্ড মৌসুমকে কেন্দ্র করে মূল্য পরিবর্তন করে। এক জন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর পোর্টফলিও তাই এমন হওয়া উচিত যেন তা বাজারের এই সকল ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্টকে কম বেশি ধারন করতে পারে। 

ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী তারাই যাদের পুঁজির পরিমাণ ১ কোটি টাকার নিচে, তবে আমাদের দেশের অধিকাংশ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর পুঁজি ১০ লক্ষ টাকার ও কম। তাই আমি স্টেন্ডার্ড হিসেবে ৫ লক্ষ টাকার একটি পোর্টফলিও গঠন করতে যাচ্ছি। যাঁদের পুঁজি ১-৫০ লাখ টাকার মধ্যে তদের জন্যে ও একই কৌশল প্রযোজ্য শুধু টাকার পরিমাণটি ভিন্য ভিন্য হবে।

পোর্টফলিও গঠন কৌশলঃ


রুল-১  প্রথমেই মোট পুঁজির ১০% আলাদা করুন। এই টাকা সব সময় মেচ্যুর্ড ক্যাশ হিসেবে আপনার বিও একাউন্টে থাকবে। এটি হল জরুরী নিরাপত্তা তহবিল। বাজরে সৃষ্টি হওয়া হটাৎ সুযোগ, রাইট/প্রাইমারি শেয়ারে আবেদন অথবা বিনিয়োগকৃত শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক রকম কমে গেলে জরুরী তহবিল ব্যবহৃত হবে। ব্যবহারের ফলে ত্তহবিল কমে গেলে নতুন ক্যাশ যোগ করে অথবা পোর্টফলিও তে লাভে থাকা শেয়ার বিক্রি করে যথাসম্ভব দ্রুত তহবিলের পরিমাণ ঠিক করুন।
রুল-২ পোর্টফলিও তে  নুন্যতম ২ থেকে ৪ টি সেক্টরের শেয়ার থাকতে হবে আর মোট কম্পানির সংখ্যা হবে ৬ থেকে ১০ টি। তবে কোন ভাবেই যেন কম্পানি সংখ্যা ১০ টির বেশি না হয়।
রুল-৩ পোর্টফলিও তে থাকা কম্পানির সংখ্যা ৬ অথবা ১০ যাই হোক না কেন প্রতিটিতেই বিনিয়গকৃত টাকার পরিমাণ সমান বা খুব কাছাকাছি হতে হবে। কম্পানি ভেদে টাকার পরিমানে অত্যধিক গড়মিল হলে বিপদ ঘটতে পারে। বেশি বিনিয়োগ থাকা শেয়ারটির দাম পড়ে গেলে জরুরী তহবিলের টাকায় শেয়ার কিনে যেমনি গড় ক্রয় মূল্য কমানো যাবে না তেমনি অন্য শেয়ারগুলর লাভ দিয়েও ঐ ক্ষতি পূরণ কড়া যাবে না। তাই প্রতি শেয়ারে বিনিয়গের পরিমাণ সমান রাখুন।
রুল-৪ আপনার পুঁজির উপর ভিত্তি করে শেয়ার বাছাই করুন। পুঁজির পরিমাণ ৩ লক্ষ টাকার কম হলে ৫০/৬০ বা তার নিচে শেয়ার, ৫ লক্ষ টাকার কম হলে ২০০/২৫০  বা তার নিচের শেয়ার আর ১০ লক্ষ টাকার কম হলে ৫০০/৫৫০ বা তার নিচের মূল্যে লেনদেন হওয়া ফান্ডামেন্টালি ভাল কম্পানির শেয়ার টার্গেট করুন।

রুল-৫ পোর্টফলিও তে থাকা কম্পানির সংখ্যা যাই হোক না কেন তার অর্ধেক জুন ক্লোজিং ও বাকি অর্ধেক যেন ডিসেম্বর ক্লোজিং হয় তা নিশ্চিত করুন।




৫ লক্ষ টাকার পোর্টফলিও
 
প্রথমেই ৫ লক্ষ  টাকার ১০ ভাগ মানে ৫০ হাজার টাকা জরুরী তহবিলে রাখুন। মোট ৮ টি ভিন্ন ভিন্ন কম্পানির শেয়ার কিনুন। চারটি সেক্টর থেকে কিনতে চাইলে, প্রতি সেক্টর থেকে ২ টি করে মোট ৮ টি আর তিনটি  সেক্টর থেকে কিনতে চাইলে, প্রথম দুই সেক্টর থেকে ৩ টি ও বাকি একটি সেক্টর থেকে ২ টি করে মোট ৮ টি কম্পানির শেয়ার কিনুন। অবশ্যই লক্ষ রাখুন ৮ টি কম্পানির ৪ টি যেন জুন ক্লোজিং ও বাকি ৪ টি যেন ডিসেম্বর ক্লোজিং হয়। যদি সম্ভব না তবে যেন ৫/৬ টি ডিসেম্বর ক্লোজিং ও বাকি ২/৩ টি জুন ক্লোজিং হয়।


একটি কম্পানির শেয়ার কী ভাবে কিনবেন ?

বিনিয়োগ যোগ্য ৪,৫০,০০০ টাকা সমান ৮ ভাগে ভাগ করায় প্রতিটি শেয়ারে জন্য বরাদ্ধ প্রায় ৫৬ হাজার ২৫০ টাকা। এটিকে তিন ভাগে ভাগ করুন (১) ২৭,৫০০ [৫৬ হাজার এর ৫০%]  (২) ১৬,৮০০ [৩০%] (৩) বাকি ১১,৫৫০ [২০%]

প্রথম ভাগ বিনিয়োগ করে ১/২ সপ্তাহ পর্যবেক্ষনে খাকুন। আমরা সবাই শেয়ার কেনার পড় দিন থেকেই আশা করতে থাকি যে দাম বাড়বে কিন্তু ঘটনা ঘটে তার উল্ট, দাম ১/২ সপ্তাহেই ৫ থেকে ১০% কমে যায়। দাম কমে গেলে ২য় ভাগের টাকা বিনিয়োগ করুন। দাম আরো ১০% কমে গেলে ৩য় ভাগের টাকা বিনিয়োগ করুন। প্রতি বার শেয়ার কেনার আগে অবশ্যই খোঁজ খবর নিন কেন দাম এভাবে কমছে। কম্পানির আয় কমে গেছে, পরিচালকেরা তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন ইত্যাদি যথাযথ কারন খুজে পেলে ২য় ও ৩য় ভাগের বিনিয়োগ থেকে দূরে থাকুন। আর যদি স্বাভাবিক কারেকশন মনে হয় তবে ২য় ও ৩য় ভাগ বিনিয়োগ করুন।

আর যদি আপনি সত্যিই ভাগ্যবান হোন, শেয়ার কেনার পর পরই যদি দাম বাড়তে থাকে তাহলে আগে খোঁজ করুন কেন দাম বাড়ছে ? কোন ভাল মূল্য সংবেদনশীল তথ্য কি কম্পানি দিয়েছে? দিয়ে থাকলে ২য়/৩য় ভাগের টাকায় অল্প অল্প করে এমন সংখ্যক শেয়ার কিনুন যেন আপনার গড় ক্রয় মূল্য বাজার মূল্যের চাইতে ৫/১০ ভাগ কম থাকে। আর যদি গ্রহণযোগ্য কোন কারন না পান তবে ২য়/৩য় ভাগ বিনিয়োগ না করে আপেক্ষায় থাকুন ২০/২৫ ভাগ লাভ পেলে বিক্রি করে লাভ তুলে নিন। কিছু দিন পর দাম আবার আপনার ক্রয় সীমায় আসলে পুনরায় বিনিয়োগ শুরু করুন।   


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন