বিষয় সন্ধান

শুক্রবার, ১০ জুলাই, ২০১৫

ভ্যালু ইনভ্যাস্টমেন্ট-১ : KPCL



বিনিয়োগ সময় কালঃ ডিসেম্বর ২০১৪ থেকে মে ২০১৫, ৬ মাস।

ভ্যালু ইনভ্যাস্টমেন্টঃ বিনিয়োগ গুরু বেঞ্জামিন গ্রাহাম প্রদত্ত এই বিনিয়োগ তত্ব, শেয়ার বাজারে প্রচলিত সবচেয়ে পুরন একটি বিনিয়োগ পদ্ধতি। খুবই সহজ এই পদ্ধতি আমাদেরকে কোন একটি শেয়ারের সঠিক ক্রয়-বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

  • যুক্তিসঙ্গত মুল্যের চেয়ে মার্কেট প্রাইস বেশি = বিক্রয়। 
  • যুক্তিসঙ্গত মুল্যের চেয়ে মার্কেট প্রাইস কম = ক্রয়।


যুক্তিসঙ্গত মূল্য নির্ধারন
গত ডিসেম্বরে KPCL স্টকটি ৫৩-৫৫ এই রেঞ্জে ট্রেড হতে থাকে। অথচ ৩য় প্রান্তিকে কম্পানির আয় ছিল ৪.৭৭ যা ১২ মাসে প্রজেক্ট করলে হয় (৪.৭৭/৯)*১২ = ৬.৩৮ টাকা। আর তৃতীয় প্রান্তিকে এনএভি ছিল ২১.৭। এই তথ্যগুল আপনারা তৃতীয় প্রান্তিকের আর্নিং রিপোর্ট পড়লেই বের করতে পারবেন। ফলে স্টকটির পিই রেশিও দাঁড়ায় মাত্র ৫৫/৬.৩৮ = ৮.৬ ! একই সময়ে মার্কেটের পিই রেশিও ছিল ১৪.৬ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের পিই রেশিও ছিল ১২। বুঝতেই পারছেন, ভাল ইপিএস থাকা সত্যেও এত কম পিই রেশিও কোম্পানিটির অবমূল্যায়িত অবস্থা নির্দেশ করছে।

অবমূল্যায়িত অবস্থা নিশ্চিত হবার জন্য এর পর আমি বেঞ্জামিন গ্রাহাম প্রদত্ত বিনিয়োগ ফরমূলা ব্যাবহার করি।
Benjamin Graham Number(BGN)/ Intrinsic Value = Square Root (22.5*EPS*NAV)
BGN of KPCL = Square Root (22.5*6.38*21.7) = 55.7

এখানে ২২.৫ হল কনস্টেন্ট, ৯ মাসের আয় ছিল ৪.৭৭ যা ১২ মাসে প্রজেক্ট করলে হয় ৬.৩৮ এবং তৃতীয় প্রান্তিকে এনএভি ছিল ২১.৭। বেঞ্জামিন গ্রাহাম ফরমূলা নিশ্চিত করছে যে, ৫৩-৫৫ টাকায় ট্রেড হওয়া KPCL আসলেই অবমূল্যায়িত অবস্থায় আছে।







এনালাসিস কৃত ফলাফলের উপর ভিতি করে ডিসেম্বর ২০১৪ এর শুরুতে ৫৫ টাকায় কিছু শেয়ার কিনি। এর পর ফেব্রুয়ারী ও মার্চের শেষে আরো কিছু শেয়ার কিনি ৫৪ টাকায়। ফলে আমার গড় ক্রয় মূল্য দাঁড়ায় ৫৪.৫ টাকা।
ভাল মূল্যে বিক্রয়ের জন্য টার্গেট করি ২০১৫ এর এপ্রিল-মে (ডিভিডেন্ড মৌসুম)। আর পিই রেশিও ১০.৫ থেকে ১১.৫ হিসেবে, বিক্রির জন্য প্রাথমিক লক্ষ ঠিক করি ৬৬-৭২।
৬.৩৮*১০.৫ = ৬৭  ও ৬.৩৮*১১.৫ = ৭৩।

এপ্রিলের শেষ ভাগে এসে মূল্য যখন ৬৬-৬৭ তে চলে আসে তখন হাতে থাকা শেয়ারের ৭০ ভাগ ৬৬ টাকায় বিক্রি করি। যা থেকে শেয়ার প্রতি ১১ টাকা লাভে প্রায় ২০% মুনাফা অর্জিত হয়।

বাকি ৩০ ভাগ শেয়ারে বোনাস নেবার জন্য রাখি। ৪০% ক্যাশ বোনাস আসার পড় থেকেই শুরু হত মূল্যের উর্ধগতী যা এক সপ্তাহেই আমার সর্বোচ্চ টার্গেট ৭২ কে অতিক্রম করে। এই অবস্থায় মূল্য সর্বোচ্চ কত হতে পারে তার কোন ধারনা না থাকায় ৩% ট্রেইলিং স্টপ সেট করে বিক্রির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করি। এর মধ্যে রেকর্ড ডেট পার হয়ে যাওয়ায় উপরি হিসেবে লাভের খাতায় যোগ হয় ৪০% ক্যাশ মানে ৪*০.৯ = ৩.৬ টাকা বোনাস। অবশেষে ৮৫ টাকায় গিয়ে (দাম ১-২ ঘণ্টার জন্য ৯২ হলেও দিন শেষে ক্লোজিং প্রাইস ছিল ৮৫.১) দাম আবার পড়তে শুরু করে। ৩% ট্রেইলিং স্টপ সেট করায় ৮৫.১*০.৯৭ = ৮২.৫ এ আমি সেল সিগনাল পাই এবং সব শেয়ার ৮২ টাকায় বিক্রি করে দিতে সমর্থ হই। এই অংশে আমার শেয়ার প্রতি মুনাফা দাঁড়ায় ৮২+৩.৬-৫৪.৫ = ৩১ টাকা মানে প্রায় ৫৬% প্রফিট!

যারা বলেন এবং বিশ্বাস করেন যে, আমাদের মার্কেটে শেয়ার বাজারের নিয়ম-নীতি চলে না তারা নিশ্চিই এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবেন। ধ্যর্য ও যথাযথ নিয়ম মেনে বিনিয়োগ করলে আমাদের মার্কেটেও কোন প্রকার নিউজ বা মামুদের সাহায্য ছাড়াই আশাতীত মুনাফা অর্জন সম্ভব।



প্র্যোজনীয় লিংকঃ ১। ট্রেইলিং স্টপ


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন