বিষয় সন্ধান

বুধবার, ১৮ মার্চ, ২০২০

পুঁজিবাজার ২০২০: পতন মোকাবেলার পূর্ব প্রস্তুতি 



১৮ই ফেব্রুয়ারী, ২০২০ থেকে ১৬ই মার্চ, ২০২০ মাত্র এক মাসের মধ্যে DSEX ৪৮২৬ থেকে ৩৭৭৮! শতাংশের হিসেবে প্রায় ২২% পতন। ২০১৩ সালের পরে এমন তীব্র পতন আর ঘটে নাই।
যারা ক্যাশ নিয়ে বসে আছেন সেই সকল ভাগ্যবানরা ব্যাতিক্রম, বাকি সবাই এই তীব্র পতনে কম বেশি আক্রান্ত। আরো পতন হবে সেই দু:শ্চিন্তা ও আছে। কোন সন্দেহ নাই যে বাজার পরিস্থিতি খারাপ, খুবই খারাপ। এই অবস্থায় পেনিক না হয়ে নিজেকে সাহস দেয়া ও যৌক্তিক চিন্তা ভাবনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নইলে বাজারে চলমান পেনিক আপনাকেও আক্রান্ত করবে এবং ভুল সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করবে।

উঠতি বাজারে অথবা তুলনামূলক ভাল পরিস্থিতিতে আমরা অধিকাংশ বিনিয়োগকারী সেই স্টকের পেছনেই ছুটেছি যা কম সময়ে অধিক ক্যাপিটাল গেইন দিয়েছে। কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল খারাপ না ভাল সেই বিবেচনা করি নাই। কেপিটাল গেইনের সম্ভাবনা কম শুধু এই বিবেচনায় ভাল ফান্ডামেন্টাল স্টক এড়িয়ে গিয়েছি। জোয়ার ভাটার চক্রে পুজিবাজারে এখন ভাটার টান স্পষ্ট। খারাপ ও ভাল কোম্পানির তফাত এখন অনেক ভাল ভাবে বুঝা যাবে কারন কেপিটাল গেইনের রাস্তা প্রায় বন্ধ। মুনাফা করতে হলে অথবা পুজি রক্ষা করতে হলে ডিভিডেন্ড গেইন এখন প্রধান অবলম্বন যদি আপনি বাজারে এক্টিভ থাকতে চান। এত দিন সোনার দামে লোহা কিনেছেন, না কি এলুমিনিয়ামের দামে রুপা কিনেছেন তা যাচাই হবার সময় চলে এসেছে। ওয়ারেন বাফেটের ভাষায় - অথৈ পানিতে কে কী নিয়ে সাতার কেটেছে তা বুঝা না গেলেও পানি হাটুর উচ্চতায় নেমে আসলে জানা যায় কে সব হারিয়ে দিগম্বর হয়ে গেছে।

অনেকেই হয়ত রাগ করে জানতে চাইবেন - " শুধু কি খারাপ স্টক কমেছে? আপনার পছন্দের সুশীল ফান্ডামেন্টাল স্টক ও পড়েছে। এগুলো আরো বেশি পড়েছে। "

জী। আমার পছন্দের বিগ পেইড আপ ফান্ডামেন্টাল বেশি করে পড়েছে বলেই ইন্ডেক্স ২২% নাই হয়ে গেছে মাত্র এক মাসে! বাস্তব সত্য হল করোনা আতংক পুজিবাজারে চিরস্থায়ী না। আর DSEX ও আজীবনের জন্য ৩০০০ এর ঘরে বন্দি থাকবে না। বাজার ভবিষ্যতে ভাল হলে এই ফান্ডামেন্টাল বিগ পেইডআপগুলোর ঘাড়ে চড়েই ভাল হবে। আর ভাল হতে সময় লাগবে যা অনির্দিষ্ট - হয়তো এক,দুই কিংবা চার বছর।
প্রশ্ন হল এই অনির্দিষ্ট দুই, চার বছরে কি পরিমান রিটার্ন জেনারেট করবে আপনার বিনিয়োগ? আপনার ৩০ টাকায় কেনা স্টক বছরে ২.৫-৩ টাকা ক্যাশ দিয়ে গেলে বিশেষ চিন্তার কিছু নাই। কারন ঐ ৩০ টাকার স্টক এখন ২০ টাকায় বেচে দিয়ে ব্যাংক এফডিআর করলেও ২ টাকার বেশি মিলবে না। সুতরাং ৩০ টাকার স্টক ১৫-২০% লসে সেল দেয়ার চাইতে হোল্ড করে ক্যাশ ডিভিডেন্ড নেয়াই উত্তম। ২-৩ বছরে যা ক্যাশ পাবেন তা একই স্টকে রিইনভেস্ট করে এভারেজ বাই প্রাইস কমিয়ে আনুন। ইনশাল্লাহ সুসময়ে বিনিয়োগ দুই-তিন গুন হয়ে যাবে।

কিন্তু যে হট স্টক আপনি ৫০-১০০ টাকায় কিনেছেন তা যদি ক্রায় মূল্যের তুলনায় ৫-৭% ডিভিডেন্ড ইনকাম জেনারেট করতেও অক্ষম হয় তবে উপরে বর্নণা করা বাই এন্ড হোল্ড স্ট্রেটেজি ও আপনাকে মন্দা বাজারে সুরক্ষা দিতে পারবে না। আপনাকে হয় দুর্ভাগ্য মেনে নিয়ে দ্রুত লস রিয়েলাইজ করতে হবে অথবা অনির্দিষ্টকালের জন্য এই স্টকে আটকে থাকতে হব। তৃতীয় আরেকটি বিকল্প হতে পারে এই ধরনের লো ডিভিডেন্ড ঈল্ড স্টকগুলোকে হাই ঈল্ড স্টকে কনভার্ট করা।

আমার এক যুগের ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় মন্দা বাজারে টেকার কৌশল একটাই - যথাসম্ভব বেশি ক্যাশ হোল্ড করা। আর ক্যাশ হোল্ড করার সুযোগ না হলে অধিক সংখ্যক হাই ডিভিডেন্ড ঈল্ড এর স্টক হোল্ড করা। এই দুটোই মন্দা সময়ে আপনার জন্য বছর শেষে কিছু ক্যাশ জেনারেট করতে সক্ষম।

অনেকেই হয়ত প্রশ্ন করবেন - ভাল হাই ঈল্ডের স্টক কিনে অপেক্ষা করে কি লাভ? বাজার কি আর ভাল হবে ইহজীবনে? তাদের জন্য আমার উত্তর হবে - এই বাজারেই ৯৬ এর পরে ২০০৯-১০ এসেছিল। ২০১১-১২ সালের পরে ২০১৭ এসেছিল। ইনশাআল্লাহ ২০১৮-২০২০ এর দুঃসময় কাটিয়ে আবারো সুসময় ফিরবে। ব্যাংকগুলোর মুনাফা করার হার কমে আসছে দিন দিন। ৬-৯ গেড়াকলে পড়ে কনভেনশনাল ব্যাংকিং এ মুনাফা করা আরো কষ্টসাদ্ধ হবে। ব্যাংকগুল ইতিমধ্যেই মুনাফা বাড়ানোর জন্য অল্টারনেটিভের খোজে আছে। অবমূল্যায়িত পুজিবাজার এক্ষেত্রে অনেকগুলো বিকল্পের মধ্যে একটা হতে পারে। ব্যাংকগুল ইতিমধ্যেই পুজিবাজারে ২০-৩০% লসে আছে। লাভ না করে শুধু এই লসটা কমাতে পারলেও তাদের মুনাফা বাড়বে প্রভিশনিং কমে আসার কারনে। বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত ২০০ কোটির ফান্ড নিয়ে ব্যাংকগুল নিঃসার্থ ভাবে পুজিবাজার উদ্ধার করতে আসবে তা আমি প্রত্যাশা করি না। তারা নিজের সার্থে মুনাফা করার সম্ভাবনা দেখলেই আসবে। তারা যদি ধসে যাওয়া মার্কেটে বিনিয়োগ করে ২০-৪০% মুনাফা করতে পারে তবে ধৈর্যশীল হলে একই পরিমাণ মুনাফা আমাদের মত ব্যাক্তি বিনিয়োগকারীদের ও হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন