সাম্প্রতিক সময়ে দেশের পূঁজি বাজারে সুবাতাস বইছে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া উর্ধ্মূখী বাজার ছোট ছোট প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে মাত্র চার মাসে ৪৬৪৯ থেকে ৪৯৫৬ তে পৌঁছে গেছে। যা গত দুই বছরের মধ্যে ইনডেক্সের সর্বোচ্চ অবস্থান। প্রান্তিক বিবিয়োগকারী থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, পূঁজি বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সমূহ, সরকারের নীতি নির্ধারক মহল সকলেই আশাবাদী হয়ে উঠেছে।ধীর্ঘ ছয় বছরের খড়া কাটিয়ে বাজার তার হৃত জৌলুস ফিরে পাবে এই প্রত্যাশা সকলের।
ছোট বড় সবাই নতুন স্বপ্ন বুনছেন। ২০১০ এর তিক্ত অভিজ্ঞতার পর আবারো আলোর ঝল্কানী দেখছে সবাই। গত ছয় বছরে বহু বার এমন ঝল্কানী দেখা গেলেও তা মিলিয়ে যেতে সময় লাগেনি। তবে এবারের অবস্থা বহু দিক থকে ব্যাতিক্রম। অর্থনীতির প্রায় সকল সূচকই বহু দিন থেকে উর্ধ্মুখি শুধু পূঁজি বাজার ছারা। ফলে ব্যাক্তি শ্রেণীর বিনিয়োগকারী, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, বাজার বিশ্লেষক ও নীতি নির্ধারনী মহল সকলেই এক সুর-তাল-লয়ে বলছেন যে, পূঁজি বাজারে সুদিন আসন্ন।
পতন শেষে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে এতে নতুন কোন চমক নেই। বিশ্ব জুড়ে পূঁজি বাজারে উত্থান-পতন নিয়মিত ঘটনা, যা চক্রাকারে চলে আসছে। বরং সর্ব শেষ পতনের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে ছয় বছর সময় নেয়াই কিছুটা অপ্রতায়শিত। দেরিতে হলেও আমাদের পূঁজি বাজার আবার উঠে দাঁড়াবার পূর্বাভাস দিচ্ছে। যা বাজার সংশ্লিষ্ট সকলকেই হতাশা ঝেড়ে ফেলে নতুন উদ্যমে পথ চলার স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
প্রতিটি পতন থেকেই পূঁজি বাজার সংশ্লিষ্টরা কিছু না কিছু শিক্ষা গ্রহণ করে। আমাদের অবস্থাও ব্যাতিক্রম নয়। নিয়ম-নীতি, আইন-কানুন, ম্যানেজমেন্ট অনেক কিছুই আমূল পাল্টে ফেলা হয়েছে। তবে বিনিয়োগকারী হিসেবে আমাদের মানসিকতা ও বিনিয়োগ চিন্তায় ব্যাপক পরিবর্তন না আসলে শুধু মাত্র আইন-কানুন দিয়ে পুঁজির পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান সম্ভব নয়।
তাই বিনিয়োগকারী হিসেবে আমাদের পরিপক্ক বিনিয়োগ মানসিকতা ও সুবিবেচনা বোধের পরিচয় দেয়ার সময় এসেছে। আগ্রাসী না হয়ে বিনিয়োগে শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক মুনাফা অর্জনের চেষ্টা পূঁজি বাজারে সুসময় ফিরিয়ে আনতে ও তা ধীর্ঘস্থায়ী করতে সহায়ক। বিনিয়োগকারী হিসেবে নিজের স্বার্থেই প্রত্যেকের উচিত বাজারকে এই নুন্যতম সহায়তাটুকু প্রদান করা।
বিনিয়োগ গুরু ওয়ারেন বাফেট বলেন, 'শঙ্কিত হও সবাই যখন আশাবাদী, সাহসী হও সবাই যখন ভীতসন্ত্রস্ত' । বাজার নিয়ে সবাই এখন আশাবাদী। চারপাশের উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভেসে না গিয়ে বুদ্ধিমান বিনিয়গকারীদের জন্য সময় এখন সাবধানী হবার। মন্দা বাজারে ভাল ষ্টক ন্যায্য দামে বা অবমূল্যায়িত অবস্থায় কেনার জন্য অনেক বেশী যুসোগ পাওয়া যায়। ঠিক বিপরীত অবস্থা হয় উঠতি বাজারে। ন্যায্য দামে কেনার সুযোগ যেমন কমে আসে তেমনি উচ্চ দামে মানহীন শেয়ার কেনার আশঙ্কা বাড়তে থাকে।
তাই উঠতি বাজারে বুদ্ধিমান বিনিয়গকারীরা কেনার ক্ষেত্রে অধিক সাবধানতা অবলম্বন করেন। কারন কেনার সময়-ই মুনফা নিশ্চিত করতে হয়, বিক্রি করে মুনাফা সম্ভব নয়। মূল্য ছাড়ে (অবমূল্যাতিত ষ্টক) অথবা ন্যায্য দামে কিনতে পারলেই শুধু মুনাফা সহ বিক্রি করার সুযোগ পাওয়া যায়। উচ্চ দামে কিনে অতি উচ্চ দামে বিক্রি করার সম্ভবনা তুলনামূলক ভাবে অনেক কম।
সবাই যেহেতু বাজার নিয়ে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশী আশাবাদী সেহেতু ভয়ে গুটিয়ে যাওয়া অনাবশ্যক। শুধু কেনার সময় একটু অতিরিক্ত সাবধানী হলেই বড় ক্ষতির ফাঁদ থেকে বাঁচা সম্ভব। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী হিসেবে পুঁজির নিরাপত্তা সর্বাগ্রে তার পর মুনাফা অর্জনের চেষ্টা। গত দুই তিন মাসে বাজারের সব শেয়ারই কম বেশী বেড়েছে। যা কিনেছেন তাতেই মুনাফা পেয়েছেন অনেকে। কারন বেশীর ভাগ ষ্টক ছিল অবমূল্যাতিত।
কিন্তু এমন অবস্থা ক্ষনস্থায়ী। উর্ধ্মূখী বাজরে দ্রুতই বহু ষ্টক ন্যায্য দামে চলে যাবে। কোন কোনটি অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়বে। তাই আজ যা অল্প মুনাফায় বিক্রি করছেন তা আগের মূল্য স্তরে কেনার সুযোগ না ও পেতে পারেন। ওয়ারেন বাফেটের ভাষায়, "পূঁজি বাজার এমন এক স্থান যা ধৈর্যহীনদের পূঁজি ধৈর্যশীলদের পকেটে স্থানান্তর করে"। আর তার সহযোগী চার্লস মঙ্গার বলেন, "কেনা-বেচায় (ট্রেডিং) বড় মুনাফা সম্ভব নয়, যা অপেক্ষায় (বিনিয়োগ) মেলে।"
তাই পোর্টফলিওতে থাকা ভাল শেয়ারগুলোকে সময় দিন, যেন ন্যায্য দাম ফিরে পায়। শুধু সেই স্টকগুলি বিক্রি করুন, যা আপনার বিবেচনায় অতিমূল্যায়ীয় হয়ে যাচ্ছে। তাতে আপনি এক দিনে মুনাফা নগদায়ন করতে পারছেন অপর দিকে পোর্টফলিওকে ঝুকিমূক্ত রাখতে পারছেন।
তাই হুট হাট ষ্টক পরিবর্তন না করে, ভাল যা আছে তাতেই থাকুন। ভাল দাম পেলে অল্প অল্প করে ধাপে ধাপে বিক্রি করুন। যদি নতুন কিছু কিনতেই হয় তবে কৃপণতার পরিচয় দিন। যাচাই বাছাই করে, দামাদামির চূড়ান্ত করে কিনুন। ঠিক যে ভাবে কাঁচা বাজারে শাকসবজি কেনেন সে ভাবে। হট টিপস আর বেড়ে যাওয়া হট ষ্টকের পিছু ধাওয়া না করে ভাল ষ্টক কমে/ন্যায্য দামে কেনার চেষ্টা করুন। কারন কিনেই মুনাফা নিশ্চিত করতে হয়, বিক্রিতে নয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন