শেয়ার মার্কেটে
বিনিয়োগ করেছেন অথচ PE Ratio এর নাম শোনেননি এমন উদাসীন বিনিয়োগকারী এই ২০১৫ তে খুঁজে
পাওয়া যাবে না বলেই আমার বিশ্বাস। কারন ২০০৭ ও ২০১০ এর মার্কেট ধস আমাদের
বিনিয়োগকারীদের অনেক বেশী সচেতন ও শিক্ষিত করেছে। তবে এই শিক্ষায় ও আছে শুভঙ্করের
ফাঁকি। শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের প্রাথমিক পাঠ নিয়েই আমাদের অলসতা চলে আসে, নতুন কিছু জানার ও শেখার ইচ্ছা,
প্রচেষ্টা কোন কিছুই আমরা বেশী দিন ধরে রাখি
না। অথচ ট্রেড আওয়ার ছাড়া এক জন বিনিয়োগকারীর সবচেয়ে বেশী সময় কাটার কথা বিভিন্ন
কোম্পানির প্রান্তিক প্রতিবেদন এনালাইসিস ও বিভিন্ন এনালাইসিস টেকনিক শিখে ও তাদের
ব্যবহার অনুশীলন করে।
কোন কিছুর পেছনে লেগে
না থাকলে সাফল্য আশা করা বোকামি। এটা বুদ্ধি ও কৌশলের বাজার, এখানে অন্যের চাইতে নিজেকে এগিয়ে রাখতে না পারলে মুনাফার দেখা পাওয়া
অসম্ভব। তাই অহেতুক গুজবের পেছনে দৌড়ে আর ট্রেড-স্ক্রিনের দিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা
তাকিয়ে থেকে বিশেষ কিছু অর্জিত হবে না। এগুল করে গড় পড়তা মুনাফা করা সম্ভব হলেও
শেয়ার মার্কেটের সফলদের কাতারে নিজেকে তুলে আনতে পারবেন না। উপায় একটাই নিজেকে আরও
শিক্ষিত ও যোগ্য করে তুলুন, নতুন নতুন এনালাইসিস ট্যাকনিক শিখুন ও চর্চা করুন।
পত্রিকার অর্থনৈতিক
পাতার রিপোর্টার, মার্কেট এনালিস্ট ও বাজারের কর্তা ব্যাক্তি থেকে শুরু
করে অর্থনীতির শিক্ষক সবাই গলা ফাটাচ্ছে – ‘ ফান্ডামেন্টাল দেখে
শেয়ার কিনুন। কোম্পানির আয় ও PE
Ratio দেখেনিন। PE যত কম তত ভাল, ১৫-২০ এর উপর হলেই বিপদ।’ মানছি তারা আমাদের
ভালোর জন্যই বিনা মূল্যে উপদেশ দিচ্ছেন, জ্ঞান বিলচ্ছেন। ‘PE ২০ এর নিচে হলেই নিরাপদ’ এই টোটকা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাজ করলেও সব ক্ষেত্রে কার্যকর নয়।
পেরাসিটামল তিন বেলা খেলে ভাইরাল জ্বর ভাল হলেও টাইফয়েড সারবে না।
‘ভাল জিনিসের দাম বেশি হয়’ এটা বহু পুড়ন কথা। আমাদের শেয়ার বাজারও এর থেকে
ব্যতিক্রম নয়। ফলে আমাদের মার্কেটেও অনেক বেশি PE এর শেয়ার আছে। এদের
সবগুলোই যেমন ফান্ডামেন্টালি ভাল নয় তেমনি বেশ কিছু কোম্পানি আছে যারা খুবই ভাল।
কিন্তু উচ্চ দাম ও বেশি PE এর শেয়ার বলে আমরা তাদের এড়িয়ে চলি। Growth company / growth stock এই টার্ম আমরা কম-বেশী সবাই শুনেছি। ধীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগে সর্বাধিক মুনাফা
করার জন্য growth stock আদর্শ। কিন্তু এ ধরনের শেয়ার কম দামে পাওয়া অসম্ভব। তাই
কোন growth stock বিনিয়োগযোগ্য আর কোনগুলো অধিমূল্যায়িত তা বুঝতে না পারলে আপনার বিনিয়োগ
ব্যর্থ হতে বাধ্য।
Year
|
EPS
|
Profit
|
Growth
|
2010
|
12.73
|
2497.12
|
21.00%
|
2011
|
12.30
|
3257.48
|
30.00%
|
2012
|
9.76
|
3618.57
|
11.00%
|
2013
|
8.56
|
4127.79
|
14.00%
|
2014
|
8.92
|
4944.55
|
19.00%
|
2015
|
10.80
|
5986.40
|
21.00%
|
উপরের তথ্য আমাদের মার্কেটে ট্রেড হওয়া একটি কোম্পানি। গত ৫ বছর ধরে গড়ে ২০% হারে
বাড়ছে এই কোম্পানির আয়। বছর বছর স্টক ও ক্যাশ মিলিয়ে ৩০-৪০% ডিভিডেন্ড দিচ্ছে
টাকার অংকে তা শেয়ার প্রতি ২৫-৩৫ টাকার সমান। খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই স্টকের দাম অনেক বেশি ফলে PE Ratio থাকে ২৫-৩০ এর
ঘরে। তাই ‘PE Ratio ২০ এর বেশি নয়’ – এই মন্ত্র
এখানে অচল।
তা হলে আমরা কি ভাবে বুঝব ঐ কোম্পানিটি বিনিয়োগযোগ্য না কি অধিমূল্যায়িত? যেহেতু Growth
company তাই কোম্পানির PE Ratio এর সাথে সাথে কোম্পানির Growth Rate ও আমাদের
বিবেচনায় নিতে হবে। আর এর জন্য আমাদের ব্যবহার করতে হবে PEG ও PEGY এই দুটি Ratio
Price earning to growth ratio (PEG) = PE/ Growth Rate
Price earning to growth and Yield ratio (PEGY) = PE/ (Growth Rate +
Yield)
Growth Rate = 100*((This Year’s profit – Last Year’s profit) / Last
Year’s profit)
Yield = Dividend / Current Market Price
এই দুটি রেশিও এর মান ১ এর নিচে হলে (০.৫-০.৭ আদর্শ) আমরা অনায়াসে ঐ গ্রোথ
কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পারি। আমাদের উদাহরণের কোম্পানিটির PE- 25 থেকে 35 এ
ঘোরাফেরা করে, G- 20 ও Yield- 10 ।
অর্থাৎ PE যখন 25 তখন, PEG = 25/20 = 1.25 আর PEGY = 25/(20+10) = 0.83
আর PE যখন 30 তখন, PEG = 30/20 = 1.5 আর PEGY = 30/(20+10) = 1
বুঝতেই পারছেন খুব ভাল কোম্পানি
হওয়া সত্যেও এই কোম্পানি 25 PE বা তার কমে যত নিরাপদ ঠিক ততটাই ঝুঁকিপূর্ণ PE 30 অতিক্রম
করলে। অতএব শুধু PE Ratio 20 এর বেশি হলেই ভয় পাবেন না, কোম্পানিটির PEG ও PEGY Ratio হিসেব করে
দেখুন, হয়ত বিনিয়োগযোগ্য অবস্থায় আপনি একটি growth stock পেয়েও যেতে পারেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন