দেশের পুঁজিবাজার নিয়ে আমাদের প্রত্যেকের অভিযোগের শেষ নেই। তালিকা করলে নিঃসন্দেহে কয়েক দিস্তা কাগজ শেষ হয়ে যাবে।একটু ঠান্ডা মাথায় ভাবুন - কোন কোম্পানির শেয়ার কেনা মানে ঐ কোম্পানির পরিচালকদের সাথে আপনি ব্যবসায় নামছেন। ব্যবসা যত ভালোই হোক মালিক/পরিচাকদের সততার অভাব থাকলে আপনি কিছুই পাবেন না কারন মালিক/পরিচালকদের চাইতে সব ক্ষেত্রেই আপনি দুর্রল। কোম্পানির শেয়ার কেনা মানেই পার্টনারশীপ ব্যবসা যেখানে আপনি হলেন দুর্বল পার্টনার। তাই শক্তিশালী পার্টনারের সততা খুবই গুরুত্বপুর্ন ইস্যু।
পুঁজিবাজারে লিস্টেড কোম্পানির সংখ্যা প্রায় তিন শতাধিক। কিন্তু আমার আপনার মত ছোট বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিও
সাজাতে শেয়ার লাগে মাত্র ৫-৭-১০ টা। তাই ব্যবসা ও মালিক/পরিচালক দেখে যাচাই বাছাই করতে হবে। বিএসইসি,ডিএসই যাচাই
বাছাই করে দিবে আর আপনি চোখ বুজে কিনবেন তা হলে ব্যবসা লাটে উঠবে। যা করার নিজেকেই
করতে হবে। যাচাই বাছাই কাজে কেউ সহায়তা
করলে তা বোনাস কিন্তু তাদের ভরসায় নিজের কাজে ফাঁকি দেয়া যাবে না।
আপনি ভাল মালিকের খোঁজ পেলেন,ভাল ব্যবসার খোঁজ পেলেন কিন্তু বাজারে ঐ কোম্পানির শেয়ার কিনলেন উচ্চ দামে – এভাবেও আপনি লসের
স্বীকার হতে পারেন। জিপি,স্কয়ার বাজারের প্রথম সারির কোম্পানি কিন্তু বিনিয়োগের জন্য ৫০০ টাকায় জিপি, ৩৩০ টাকায় স্কয়ার কেনা আর ৩০০ টাকায় জিপি,২৪০ টাকায় স্কয়ার কেনা এক বিষয় নয়। ভাল ব্যবসা,সৎ / তুলনামূলক ভাবে সৎ পরিচালক এর পাশাপাশি কম দামে শেয়ার কিনতে
হবে। শেয়ারের যৌক্তিক দামের তুলনায় ২০-৪০% কমে/ডিস্কাউন্টে কিনতে না পারলে পুঁজিবাজারে মুনাফা করা সম্ভব
না। এখানে কেনার সময় জিততে হয় বিক্রি করে জেতা যায় না। বাজারের ৬ মাস ১২ মাস পর পর
ছোট -বড় ধস নামে। ভাল কোম্পানি কিনতে হবে এই সময়ে।
সব শেষে প্রয়োজন ধৈর্য। ভাল
ব্যবসা,সৎ পরিচালক,২০-৪০% ডিস্কাউন্টে শেয়ার কেনা - সবই আপনি ঠিক ভাবে করলেন। কিন্তু আপনি ঠিক
ঠাক কিনেছেন বলেই তার দাম কেনার পর থেকেই হু হু করে বাড়তে হবে এমন কোন কথা নাই।
আমি/আপনি এমন কোন বিখ্যাত লোক নই যে আমাদের কেনার পর পর ই ঐ স্টক নিয়ে বাজারে
কানাঘুষা শুরু হয়ে যাবে। ব্যবসা ভাল বলে যেমন আপনার নজরে পড়েছে একই ভাবে তা
অন্যদের নজরেও পড়বে। ব্যবসা ভাল হলে তার
চাহিদা বাজারে কোন এক সময় সৃষ্টি হবেই। বাজারের এই রিকগনিশন পর্যন্ত আপনাকে ধৈর্য
ধরতে হবে। এমন স্টক কিনতে হবে যেন এই অপেক্ষার সময়ে কোম্পানির দেয়া ডিভিডেন্ডে
আপনার ৭-৮% (ব্যাংক রেটের সমান ) মুনফা হয়। বাজারে যখন স্টকটি ন্যায্য দামে ট্রেড
হওয়া শুরু করবে তখন আপনি ২০-৪০% ডিস্কাউন্টকে মুনাফা য়াকারে তুলে নিবেন। এর জন্য
২-৩ বছর ও অপেক্ষা করতে হতে পারে। বিনিয়োগ হচ্ছে কচ্ছপ আর খরগোশের দৌড় প্রতিযোগীতার
মত যেখানে আমরা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী কচ্ছপরা ইন্সটিটিউট/গেম্বলার/মার্কেট মেকার নামক
খরগোশদের সাথে দৌড় প্রতিজোগীতায় নামি।
এই ভাবে চিন্তা করুন - এতে
বিএসইসি,ডিএসই,আইসিবি,মামু,গেম্বলার বাজারে
কে কি করল তাতে আপনার কিছুই আসবে যাবে না। ২০১০ এর পর থেকে বাজার মিন্দা কিন্তু
স্কয়ার,জিপি,অন্যান্য মাল্টিন্যাশনাল,ব্যাক ব্যাংক,অলিম্পিক,রেনেটা ও অন্যন্য কিছু দেশি ভাল কোম্পানিতে যারা বিনিয়োগ
করেছেন তাদের পুঁজি এই নয় বছরে চার-পাঁচ গুন হয়েছে। অন্যরা বাজার থেকে হারিয়ে গেছে অথবা
এখনো ধুকছে। তাই আগামীর স্কয়ার, জিপি হওয়ার
সম্ভবনা আছে এমন কোম্পানিগুল খুঁজে ধীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন